সৈয়দ আহমেদ নোমান -এর কবিতাwww.bangla-kobita.com ওয়েবসাইটে সৈয়দ আহমেদ নোমান -এর প্রকাশিত কবিতাসমূহ।uuid:7d185313-565e-4d50-be79-02a6df9502c9;id=192024-03-29T07:40:57Zhttps://www.bangla-kobita.com/sanoman/post20141023112654/চা বাগানে দাসত্ব2014-10-23T23:28:15-04:002023-06-26T05:36:08-04:00সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/<p>এয়ার-টাইট প্যাকেটে মোড়া<br />কালো দানা সবুজ দানার চা দেখেছি।<br />দেখিনি কোন চা দাসের রৌদ্রদগ্ধ কালো শরীর।।</p>
<br /><p>উষ্ণ লিকারে তেজদ্দিপ্ত ধোঁয়া রাশি দেখেছি<br />দেখিনি দিন শেষে চা দাসের বিমর্ষ চেহারা।<br />চায়ের কাপে অধর রাখতেই<br />নিস্তেজ দেহ নিমেষেই সতেজ।<br />কখনও ভাবিনি, আমায় সতেজ রাখতে <br />কত সজীব দেহ আজ পরিশ্রান্ত!</p>
<br /><p>কখনও কি ভেবেছি, <br />কফোটা রক্ত ও ঘামে আজকের এই করা লিকার?<br />ভেবে কি লাভ? বুঝি সবই; তবুও নির্বিকার।<br />লিকারের সাথে চিনি, দুধ আরও কত কি।<br />ওরাও চা পান করে; উপাদান যেখানে<br />লবণ, পানি, সদ্য তোলা চায়ের পাতা।<br />পরিশোধিত চা পান করতে নয়,<br />পান করানোর জন্যই যেন ধরায় আসা।।</p>
<br /><p>যুগে যুগে শাসকদের পালা বদল হয়েছে অনেকবার।<br />বদল হইনি চা দাসদের ভাগ্য।<br />শ্রমিক না বলে, দাস বলছি এই জন্য যে,<br />শ্রমিকদের পারিশ্রমিক হয়;<br />কিন্তু ওরা বিনিময় যা পায়, তা দাসত্ব ছাড়া,<br />আর কি বা বলতে পারি!</p>
<br /><p>কখনও কি ভেবেছি?<br />অনূর্ধ্ব পঞ্চাশ টাকা দাসত্বের পুরষ্কার,<br />সপ্তাহান্তে দু’চার কেজি লাল আটা,<br />রোজ ম্যানেজারের খিস্তি,<br />দেহে আঘাতের চিহ্ন,<br />কয়েদিদের মত নির্ঘুম রাত কাটানো,<br />আর চিকিৎসা! সে তো এ জন্মের নয়।<br />তবে একটা জিনিস পায় ওরা,<br />নেশায় বুদ হয়ে থাকতে যেটুকু মদ দরকার<br />পায় তার চেয়ে বেশি।<br />মদের অধিকার আদায়েই মৌলিক অধিকার গুলো বিলিন।<br />এই মদই যেন ওদের দাসত্তের কারন।।</p>
<br /><p>ব্রিটিশরা গেল, বিহারিরা এলো,<br />বিহারিরাও চলে গেল; শুরু হল বাঙালির শাসন।<br />শাসক বদলেছে, মালিক বদলেছে,<br />বদলেছে বাগান ব্যবস্থাপক,<br />বদলায়নি কেবল শাসনের ধরন,<br />দাস প্রথা ও দাসত্তের চিহ্ন।।</p>
<br /><p>16-10-2014; রাত ১১:৪০</p>@ 2024 - সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/post20141015120520/আমি কাঁদতে ভুলে গেছি2014-10-15T01:41:09-04:002023-06-26T12:12:01-04:00সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/<p>(পলিটিক্'ল নয়, পৌএটিক থো'ট থেকে লিখা)<br /> <br />আমি কাঁদতে ভুলে গেছি—<br />ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত দৃশ্য দেখেও <br />আমি আর কাঁদতে পারিনা।<br />চোখের পানি শুঁকিয়ে গেছে অনেক আগেই;<br />কপোল বেয়ে আসে না আখি জল।<br />আজ আমি স্তম্ভিত, নিস্তব্ধ, বাক রুধ; <br />আমি আর কাঁদতে পারিনা।।<br /> <br />কেননা,<br />আমি দেখেছি ধ্বংস, রক্ত, বিভীষিকা।<br />পেয়েছি শব্দ গুলির, বিস্ফোরণের, <br />নিরীহ মানুষের ক্রন্দনের।<br />নাকে এসেছে বারুদ, পেট্রোল আর তাজা রক্তের গন্ধ<br />সদ্য ছোড়া গুলির ধোঁয়ার গন্ধও এড়ায়নি আমার নাক।<br />আজ আমার কাঁদতে ইচ্ছে হয়; কিন্তু কাঁদতে পারিনা।।<br /> <br />অনেক কেঁদেছি সেদিন,<br />যেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জঙ্গির গ্রেনেডে <br />রচিত হয়েছিল লাশের স্তুপ।<br />রমনার বটমূলে বোমার আঘাতে <br />হারিয়েছিল খাঁটি বাঙালির প্রাণ।<br /> <br />কেঁদেছি আমি সেদিনও,<br />যেদিন পলটনে কিছু শহীদের ওপর <br />পৈশাচিক নৃত্য করেছিল অছাত্রের দল।<br />সোনার বাংলার সোনার ছেলেদের রক্তে <br />সিক্ত হয়েছিল পিলখানার মাটি।<br />ডুকরে কেঁদেছিল দরবার হলের প্রতিটি দেয়াল।<br />সেদিন চোখের পানিতে সিক্ত হয়েছিল <br />আমার প্রকম্পিত পদ।।<br /> <br />সাগর-রুনি হত্যা কাঁদিয়েছিল পুরো জাতিকে,<br />মেঘের চোখের জল, আমার চোখের জল মিশে একাকার।<br />শীতলক্ষ্যায় সাতটি লাশ একে একে ভেসে ওঠা,<br />কেঁদেছিল ষোল কোটি বাংলাদেশির বিবেক।<br />সেদিন কি কাঁদি নি আমি? অবশ্যই কেঁদেছি।।<br />আমি কাঁদতে ভুলে গেছি—<br />আজ আমার কাঁদতে আমার ইচ্ছে হয়; <br />কিন্তু কাঁদতে পারিনা।।<br /> <br />পেট্রোল বোমার আঘাতে শত মানুষের দহন,<br />বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষের মিছিল, মাংস পচা গন্ধ,<br />নির্বিচারে গুলি, অনাকাঙ্খিত হমিসাইড,<br />বেওয়ারিশ কুকুরের মত পড়ে থাকা মানুষের লাশ।<br />এ সবই আমাকে কাঁদিয়েছে।<br /> <br />এরা কেওই হয়তো আমার কাছের ছিল না; <br />কিন্তু মানুষ তো ছিল।<br />হয়তো বাঙালি না হয় বাংলাদেশি।<br /> <br />আজ আমার কাঁদতে ইচ্ছে হয়; কিন্তু কাঁদতে পারিনা।<br />কারন, আমি কাঁদতে ভুলে গেছি।।<br />(১৪-১০-২০১৪; রাত ১২:১০)</p>@ 2024 - সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/post20140916060549/নাহিকো তব দেখা2014-09-16T06:12:26-04:002023-06-26T12:15:16-04:00সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/<p>মাশরেক হতে মাগরেব পথে, ভ্রমেছি কত যে একা,<br />খুঁজেছি তোহায় থরে-বিথরে নাহিকো তব দেখা।<br />দুই গোলার্ধে ঘুরিয়া ফিরেছি, মেলেনি তোমার কায়া,<br />বিজন বাদারে, অতল সায়রে, কোথাও হেরিনি ছায়া।<br />খুঁজেছি আরও সবুজের মাঠে, যেথায় ফসল দোলে,<br />পাইনি তোমায় গিরিনিস্রাবে, পাইনি শৈল্ কোলে।</p>
<br /><p>ছিলেনাকো তুমি সরব বাসরে, নিরব নিশুতি রাতে,<br />ছিলেকি তুমি সুবেহসাদিকে, নাকি রক্তিম গোধূলিতে?<br />মেলেছি নয়ন, পাইবো হেথায় মুক্ত গগন পানে, <br />পাইনিকো আমি, খুজেছি তোমায় কুসুম-কুঞ্জবনে।<br />বহু রজনী জেগেছি, তবু দর্শন নাহিকো ভালে,<br />এভাবে কতযে ছুটিয়া ফিরিব! হেরিবনা কোন কালে?<br />তোমায় না হেরিয়া আজি, মম চিত্ত কাঁদিয়া মরে,<br />তুমি কি কভু আসিবে আমার জীর্ণ কুড়ে ঘরে?</p>
<br /><p>(সৃষ্টিকর্তা কে উদ্দেশ্য করে লিখা)<br /> (১২-০৯-২০১৪; রাত ১২:৪০)</p>@ 2024 - সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/post20140903010523/বন্ধুর পথযাত্রী2014-09-03T01:09:28-04:002023-06-26T05:36:06-04:00সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/<p>ওহে পথিক, দাড়ায়ে কেন নির্জন পথ পাশে ?<br />বন্ধুর পথ, কাটিল আঁচর যাত্রার অভিলাষে।<br />হতাশায় কেন ডুবিছ বাছা আজই এ ক্ষণকালে ?<br />বলিরেখা গুলো ভাসিছে কেন নির্দয় তব ভালে ?<br />কেনবা তুমি হারায়েছ পথ শঙ্কিত কায়মনে ?<br />এভাবে কভু মিলায়নি পথে কোন কালে বীর জনে ।<br />বন্ধু বানায়ে ‘বন্ধুর পথ’ দৃঢ় পায়ে ধীরে চল,<br />শত বাঁধা দলে দীপ্ত কণ্ঠে হুঙ্কার শুধু তোল।</p>
<br /><p>পিছু হতে কেহ টানিবে তোমার ধুতির আঁচল ধরি<br />কেহবা আবার হইবে সাথী ডুবাইবে তব তরী ।<br />ঈর্ষায় কেহ দহিবে যবে কুৎসা রচিবে পাছে<br />সাবুত করিতে তাহা বুনিয়া চলিবে শতসহস্র মিছে ।<br />রুধিতে তোমার রথ কণ্টক বিছাইবে পথে<br />তুমি খ্যাত হবে, সবে সাধু কবে চাইবে না কোন মতে ।<br />কুলাঙ্গার কিছু পথে পরে রয় হানিবে আঘাত ঘারে<br />উচিতে না পার তব ঘার কভু বিশ্বের দরবারে ।</p>
<br /><p>যুগে যুগে যারা হয়েছে মহৎ তাঁদেরও এমন হত<br />তাই বলে তারা এড়ায়নি কেহ বন্ধুর এই পথ ।</p>
<br /><p>ঝিমায়ে পরেছ পথিক আড়মোড়া দিয়ে জাগো,<br />রুধিতে হইবে বাঁধা, বিধাতার কাছে শক্তি সাহস মাগো<br />বন্ধু বানায়ে বন্ধুর পথ বক্ষ উঁচায়ে চলো<br />শত বাঁধা দলে দীপ্ত কণ্ঠে হুঙ্কার শুধু তোল ।</p>
<br /><p>০৩-০৯-২০১৪ ,বুধবার। <br />রাত ০১:৫০</p>@ 2024 - সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/post20140717030750/বৃষ্টি ভেজা পল্লী2014-07-17T03:08:43-04:002023-06-26T05:36:04-04:00সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/<p>ভোর না হতেই কালো মেঘে আকাশ গেছে ছেয়ে<br />এদিক থেকে সেদিক পানে ছুটসে ধেয়ে ধেয়ে।<br />বারির ফোটা আসছে নেমে আবসা রোদের ফাঁকে<br />এ যেন মেঘ দিচ্ছে সাড়া তৃষ্ণার্তের ডাকে।<br />বকের সারি ভেজা ডানায় উড়ছে কুলায় পানে<br />রাখাল ছেলে ফিরছে বাড়ি গরুর রশি টেনে।<br />কাকাবাবু ভেজা পথে চলছে মেয়ের বাড়ি<br />এক হাতে তার ভাঙা ছাতা আরেক হাতে হাড়ি।</p>
<br /><p>মাছের মনে বিষম খুশি এদিক সেদিক ছোটে<br />কইগুলো সব পুকুর ছেড়ে ডাঙার পানে ওঠে।<br />পাশের ডোবায় ডুব সাঁতারে খেলছে ব্যাঙের ঝাঁক<br />থেকে থেকে উঠছে মাতি; ঘ্যাংড়-ঘ্যাংড় ডাক।</p>
<br /><p>ইশকুলেতে যায়নি খোকা, দাদির কাছে বসি<br />রাজ কন্নার গল্প শুনে মনটা যে তার খুশি।<br />খুকু তখন খেলছে বসে নিজের মতো করে<br />ভোজন নিয়ে ব্যস্ত সে যে পুতুল বিয়ের পরে।<br />অঝোর ধারায় ঝরছে বারি; ঝুমঝুমিয়ে বাজে<br />অলস দিবস কাটছে সবার যায়নি কেহ কাজে।<br />চড়ুইভাতির আয়োজনে পাড়ার সকল মেয়ে<br />কাজের ফাঁকে কেওবা ওঠে বৃষ্টির গান গেয়ে।</p>
<br /><p>মালতী তলা ভরে গেছে সদ্য ঝরা ফুলে<br />ঘন ঘন দেয়ার মাঝে কেউ নেয়নি তুলে।<br />বিল গুলো সব ধবল চাদর, শাপলা ফুটে আছে<br />হিজল তলায় ফুলের মেলা সবাই দলে গেছে ।</p>
<br /><p>বৃষ্টি ভেজা, হলুদ রাঙা কদম ফুলের ডালে<br />হলুদ পাখি দুলছে বসে ফোঁটার তালে তালে।<br />অবাক হয়ে চেয়ে আছে দূর গগনের পানে<br />মেঘের খেলা সাঙ্গ হবে, কখন কে তা জানে।</p>
<br /><p>বৃষ্টি ভেজা পল্লী এমন পাইনি কোথাও আর<br />যেথায় থাকি মনটা ছোটে হেথায় বারংবার।<br /> <br /> (২৯-০৬-২০১৪, রবিবার; রাত ০১.০০)</p>@ 2024 - সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/post20140626121220/আমার ছোট গ্রাম2014-06-26T00:13:51-04:002023-06-27T01:44:25-04:00সৈয়দ আহমেদ নোমান https://www.bangla-kobita.com/sanoman/<p>দূর আযানের মধুর সুরে সবার ভাঙে ঘুম<br /> নামায শেষে বাসায় বসে কোরান পড়ার ধুম।<br />শিমুল গাছের উপর দিয়ে দিনের আলো ফোটে<br />আঁকাবাঁকা পাকা পথে রাখাল চলে মাঠে ।<br />ভোরের আলোয় বকুল কুঁড়ায় পাড়ার মেয়ের দল<br />কলস কাঁখে পারুল বিবি আনতে ছোটে জল।</p>
<br /><p>ঘন সবুজ গাছে ঘেরা আমার ছোট গ্রাম,<br />ফসল ভরা সবুজ মাঠে কিষাণ ঝরায় ঘাম।<br />কিষাণ বধূ ফাঁকটি পেলেই দাঁড়ায় গাছের তলে<br />ভাঙা পাখায় জুড়িয়ে দেবে ক্লান্ত হয়ে এলে। <br />গাছের ডালে দোয়েল শালিক মধুর সুরে ডাকে<br />পাড়ার ছেলে গুলতি খেলে তিন রাস্তার বাকে।<br />ডালে ডালে পাকা ফলে নুয়ে পড়ে গাছ<br />খালের জলে জেলের দলে ধরে নানান মাছ।</p>
<br /><p>বেলা পড়ে এলে, পাড়ার সকল ছেলে পশ্চিমের মাঠে<br />একে একে জমতে থাকে, খেলায় মেতে ওঠে।<br />সাঁঝের বেলায় খেলা ফেলে সবাই ফেরে ঘরে<br />গুরু মশাইর বেতের ভঁয়ে চুপটি করে পড়ে।</p>
<br /><p>ঝোপে-ঝারে; বন-বাদাড়ে জোনাক পোকার শোভা<br />বাঁশ বাগানের মাথার ওপর পূর্ণ চাঁদের আভা।<br />মাঝ মাজারে কদম গাছে একটি পাখি ডাকে<br />দাসের বাড়ির ঘন বনে শেয়ালেরা হাঁকে। </p>
<br /><p>কাঁচা, পাকা ঘরে সবার শান্তি-সুখের বাস,<br />কষ্ট-ক্লেশ মাড়িয়ে সবাই খুশি বারোমাস।<br />ভেদাভেদ নাইত মোটেই মিলেমিশে থাকি,<br />বিপদ এলেই ঝাঁপিয়ে পরি দ্বিধাদ্বন্দ্ব রাখি।</p>
<br /><p>স্বর-ব্যাঞ্জনে এঁকে দিলাম আমার গাঁয়ের ছবি<br />ইচ্ছে ছিল তুলে আনি সারা গাঁয়ের সবই।<br />সদ্য আঁকা ছবি খানা আমার ছোট গ্রাম<br />গ্রামটি আমার মির্জাপুরে; বানিয়ারা নাম।</p>
<br /><p> (২৪-০৬-২০১৪, মঙ্গলবার; দুপুর ০২.০০)<br /> মির্জাপুর, টাংগাইল।</p>@ 2024 - সৈয়দ আহমেদ নোমান