হবু রাজার মুদ্রিত চক্ষু, নুইয়া আছেন বুঝি কালের ভারে,
গবু মন্ত্রী কবিকে কহেন, শোনাও হে রসকাব্য, শুনি সুরে সুরে।
এই শুনিয়া কবি সুর ধরিলেন- শুন শুন গো সবে শুন গুনীজন,
বিচিত্র এক উল্টা রাজ্যের কথা আজি করি বরনণ।
কথন শুনিয়া, হবু রাজার মুদ্রিত নয়নও পত্র মেলিল। ,
পাইব কি কিছু রসমধুর কবি?- গবু মন্ত্রী শুধাইল।
সেই কবে হইয়াছিল জুতা আবিষ্কার, কবিগুরুর দয়ায়,
ঘোর কলিতে আজি বিস্মৃত আমরা, সকলেই তো চোখ ফিরায়।
বল কবি বল, কি বানী শুনাইতে চাহ রস মাখাইয়া  ?
দেখো মহারাজও উঠিয়াছেন অপার নিদ্রা ভাঙিয়া।
যদি শুনাইতে পার কিছু অমূল্য কথন, তবে চিন্তা নাহি আর,
আর যদি মন ভরাইতে না পার, ভবলীলা সাঙ্গ হইবে তোমার।।


গরীব কবি, উত্তরিল, মহারাজের জয় হউক,
গুনগান করে রাজকবি সর্বদাই তার কার্যের,
কিন্তু এখন কহিব গল্পকথা, শুধুমাত্র
শ ক্রোশ দুরের সে এক উল্টা গণ রাজ্যের।
উল্টা গণ রাজ্য সে এক সুবিশাল দেশ, নাহি কোনও শেষ,
সভাসদেরা সব কহিলেন – আহা, তাহা বেশ বেশ।
গত এক পক্ষকাল ধরিয়া ঘুরিলাম আনাচে-কানাচে,
সর্বশেষে পৌঁছাইলাম তাহার রাজধানী নগরের কাছে।
উল্টা রাজ্য সে যেন ঠিক শিল্পীর ব্যাঞ্জনা আর কবির কল্পনা,
ক্রমে ক্রমেই পরিণত হইতাছে সে লন্ডন বা ভিয়েনা।


খুবই বিচক্ষন রাজামহাশয়, পারদর্শী রাজ্য চালনায়,
রাজ্য পুড়িলে, তিনি আরামে শুইয়া থাকেন বিছানায়।
রাজ্য জুড়ে রোজ ঘটে সব কুখ্যাত তোলাবাজী কাণ্ড,
রাজার মুখে কুলুপ আঁটা, মন্ত্রীরা কহেন ওসব শুধুই গজদন্ত।
রাজ্যের রাজা যিনি, চালাইতেছেন রাজ্য যেন এক যন্ত্রী,
প্রজারা বলিয়া থাকেন, উনিই হলেন আসল ষড়যন্ত্রী।  
কখনো আবার বলিয়া থাকেন, সবই সাজানো ঘটনা,
কাজ নাই কান দিয়া আর, তাই সবই কাকস্য পরিবেদনা।


কানাঘাট, ফুলদুনি, আর কানন সরণি, স্থান এসবই দর্শনীয়,
সন্তানেরএর খোঁজ নাই, আর প্রজার পেটেও জোটে না অন্ন।  
রাজা বড়ই সাদামাটা, মুখে সদা হাসি, ছেদ শুধু মধুর ভাষার,
ভিঞ্চি সাহেব দেখিলেই, পালটাইয়া দিতেন হাসি মোনালিসার।
রাজা আবার রাগীও, নিমেষেই বদলিয়া যায় পরিভাষা,
যেন ঘুনাক্ষরেও না হয় বিরোধীদের সাথে মেলামেশা।

উল্টা গণরাজ্যের বড় বড় শিল্প যত, গিয়াছে অস্তাচলে,
প্রোমোটারী আর পাইকারি, রাজা খুলিয়াছেন আস্তাবলে,
নতুন নতুন শিল্প আসিতেছে, তাই ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল,
লেখাপড়া শেষ হইলেই, সকলে দিতাছে তেলেভাজার কল।
উল্টা রাজ্যের মহারাজ সুপ্রশাসক, সকলেই স্বীকারেন একবাক্যে,
তাই বছরভর উৎসব রাজ্য জুড়িয়া, কে করিবে কাহাকে রক্ষে?
শুধু নারীদের নাহি সম্মান, ধুলায় লুণ্ঠিত জনগনের প্রাণ,
পাপের বোঝায় উচ্চ হইল, সমাজ ও নগরের মান,
বিরোধীরাও পাইয়া ভয়, আপন খেয়ালে করে জয়গান,
আকাশে বাতাসে সুমধুর রব, যতই কহ না হোক কলরব,
রাজা নীরো কি ছাড়িয়া বেহালা, শুনিছে প্রজাদের ক্রন্দিত রব?
গরীবেরা আজও অসহায়, বাঁচিয়া আছে শুধু কবিদের দয়ায়,
নাই কোন মান, মন্ত্রী- সান্ত্রী যত তাহাদেরও মগজ ধোলাই দেয় ।


এত সব শুনিয়া, হবুচন্দ্র পড়িয়া গেলেন বুঝি জোর ধন্দে,
গবুচন্দ্র দেখো, কি মিল, তাই কি আমার প্রজারাও বুঝি কান্দে।
শুনিয়া গবু মন্ত্রীরও ঘুম ছুটিল, হইল চক্ষু চড়কগাছ,
অপ্সরাদের কহিলেন থামিতে আর চাই না কোনও নাচ।
শিয়রে প্রতিভূ বিপদ আমাদের, ঠিক যেন উল্টা গণ রাজ্য,
বেফাঁস কথা কহিয়াছ কবি, তাই গর্দান করিতে হইবে বর্জ্য।


কিন্তু হবু রাজা নামিয়া আসিলেন মঞ্চ ছাড়িয়া, দুবাহু বাড়াইয়া,
কহিলেন, এসহে কবিপ্রবর, দিলা তুমি আমার চক্ষু খুলিয়া।
রাজার কাজ বুঝিনু আজিকে, নয় সে শুধুই তুঘলকি চাল,
আজি হইতে চেষ্টা করিব, ফেরাইতে জনগনের দুর্দশার হাল।
আর না কেহ পারিবে মুখ ফেরাইতে, না যাইব ওই কাল ঘুমে,
পহলে কার্য, তাহারপর কথা, কর্মী আমি আজি থেকে স্বভুমে।
গবু মন্ত্রী , দাও হে কবিকে এখনই সহস্র স্বর্ণমুদ্রার উপহার,
জয়হে তোমার কবি, আজি হতে কাল নিদ্রাভঙ্গ হইল আমার
দেখিবে প্রজাগণ, হাল ধরিব আমি আবার রাজ্যের এইবার,
ফিরাইবো আমি আরেকবার এই সুন্দর রাজ্যের বাহার ।।