শোনো শোনো ওহে চন্দ্রকান্ত,
সাঁঝবেলাতে চললে কোথায়  হয়ে  হন্তদন্ত ?


আর বোলো না ভায়া, পান্থ
বাজারের ফর্দটা হারালুম, খুঁজে খুঁজে আমি ক্লান্ত ।।


ওহ, এই ব্যাপার বুঝি কান্ত, মুখে মুখে বলো তুমি,
লিখে দিই আমি, বাজার হবেই, থাকো নিশ্চিন্ত ।।


আজ্ঞে শুধু তাই নয়, চিন্তার আরো কিছু আছে ঝাঁকি,
গিন্নীর কেনা টর্চটাও গেছে, এখনো দশটা ইএমআই বাকি ।


অ্যাঁ ? কি করে যায় তা খোয়া, থাকে যদি তোমার হাতে ?
হাতে নয়, ফর্দের সাথে ছিল সে জামার বুক পকেটে ।।


বলো কি? আস্ত টর্চ কি কলম নাকি যে বুকপকেটে থাকে,
এবার বলো কি করে ভায়া, গিন্নীকে মুখ দেখাব রাতে ।।


এতো ভারি চিন্তার বিষয় হে, হারালে কি করে চন্দ্রকান্ত ?
তা ভেবে ভেবেই তো তখন থেকে রয়েছি উদভ্রান্ত ।
রাগ করবে? যদি বলি ভায়া, চিন্তা এখানেও শেষ হয় নি,
নতুন রেডিওটাও হারিয়েছি সাথে, সেটাও খুঁজে পাইনি ।।


তুমি পাগল নাকি ছাগল ভায়া, রেডিও নিয়ে বাজারে যাও ?
বিপদে পড়েছি, উদ্ধার করো, পরে না হয় যত খুশি গাল দাও ।
তা বলি বাপু, রেডিওটাতো তোমার নিজের কেনা নাকি ?
গিন্নী কিনেছিল সখ করে, এখনো দশটা ইএমআই বাকি ।।
খুব ভালো কথা, তা ওই সখগুলো নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলে শুনি ?
ওই হাবুদের নেড়িটার সাথে নিজস্বী তুলছিলাম ক-খানি।


মানে ? রেডিও দিয়ে আবার ফটো তোলা যায় নাকি ?
আরে না, ক্যামেরাটাও ছিল, এখনও দশটা ইএমআই বাকি ।
তা বাপু এত সব কিছু নিয়ে বেরোলে, কিছু না কিছু তো হারাবে,
সবই ছিল তো বুকপকেটে, কি করে বুঝব যে তা খোয়া যাবে ।।
অ্যাঁ, সব আবার বুকপকেটে ?? পথ ছাড়ো, যত্ত পাগলের কান্ড !
রাগ কোরো না, ওই নেড়ির তাড়া খেয়েই তো হল সব লন্ডভন্ড ।।


আসল কথাটা পাড়তো বাপু, এসব গৌরচন্দ্রিকা ছেড়ে,
রামতাড়া খেয়ে বুকপকেট থেকে নতুন ফোনটা গেল পড়ে ।
ওরে বাবা, আবার এতে তোমার ফোনও আছে বাকি নাকি ?
সবকিছু ছিলো ওই নতুন ফোনেই, এখনো দশটা ইএমআই বাকি ।


ও হরি, বুঝেছি, আসলে তোমার ওই  ফোনটা গেছে খোয়া,
আর আমি বেচারা ভাবছিলুম, তুমি এক তুলসীপাতা ধোওয়া ।


বেশ হয়েছে, তোমার সাথে হওয়া উচিত ঠিক এরকমই,
বাড়ি গিয়ে, গিন্নীকে বুঝিও এখনো কটা ইএমআই বাকি।
তা সোজা কথাটা সোজা ভাবে বলতে কি তোমার মানা?
জানো না ফোন ছাড়া অচল এখন এই জগতখানা ।
বাবা-মাকে ফেলে থাকা যায়, তবু ফোন ছাড়া যে চলে না
চলতে, বসতে, কাজে, অকাজে ফোন ছাড়া কেউ নড়ে না ।
তাই ফোন ছাড়া আর এ জীবনের তোমার থাকল বাকি কি ?
সোজা কথা, এই জীবনের ষোল আনাই তোমার ফাঁকি ।।