ছোট্টবেলায় পশ্চিমের ঘরের ওই জানালা দিয়ে,
উদাস মনপাখী দিত পাড়ি সুদুর ওই নীলাকাশে,
মেঘবালিকার কাছে পরীযায়ী পাখিদের গল্প শুনে,
মাএর কোলে আসতাম ফিরে রয়ে সয়ে অবকাশে,


ছেলেরা যখন খেলতে যেত, শিশিরভেজা ওই মাঠটাতে,
বাবার পাশে আমি তখন, এক আকাশ স্বপ্ন বুনতাম।
গোধূলিতে দইওলারা বাঁক নিয়ে গেলে হাঁকতে হাঁকতে
জানলার পাশে বসে, অমল ভাবে বিভোর হতাম ।।


হঠাৎ যেদিন বড় বড় সব মেশিনগুলো এসে বসল মাঠে,
স্বপ্ন নিল রক্তিমবর্ণ, আর স্বপ্নাকাশ ছুঁল ধোঁয়া কালো,
সবাই দেখি দৌড়ে পালায়, ইতস্তত জীবন নিয়ে হাতে,
দেখলাম, পশ্চিমের জানলাটা আমার শুধু বদলে গেলো ।।


দিন বয়ে, রাত চলে যায়, আকাশে আজ রঙ্গিন ভোর,  
সদ্য যুবতী তখন আমি, চোখে শুধু  নীল স্বপ্নের ঘোর।
ভালবাসায় হারিয়ে গেলাম, জীবনে হারালাম নিজের জোর,
আর একদিন, সোজা ভালবাসার সেই পুরুষ আমার,
বাক্সবন্দী করে নিয়ে গেলো তার কাছে, বেঁধে বাহুডোর ।।


হারাবার বেদনা শিরায় নিয়ে, মা ছাড়া আর কি হারালাম?
বুঝলাম, দ্বিতীয়বারের মতো আমার বাড়ি বদলালাম ।।


বিবাহের সেই প্রান্তে, সাঙ্গ যেখানে গোপন খেলা, হয় আড়ি,  
আপন হল শুধু ছেলে, বাকি সবার কাছেই হলাম হেলাফেলা।
ভালবাসার পুরুষ চোখ পাকিয়ে বললে, এটা শুধু আমার বাড়ি,
কাজ শুধু একটাই, ছেলে কোলে আবার এক বাড়ি বদলে ফেলা।


ছেলে এখন বিশাল মানুষ, সুদুর লন্ডনে সে থাকে,  
সময়াভাবের প্রাচুর্যেও একটুকু ভোলেনি সে তার মাকে ...
বয়স হল প্রচুর তাই আর কি একা থাকতে পারো ?
চল মা, তোমায় ছেড়ে আসি, ওখানে আছে এসি ঘর-ও ।
তাই আবার নতুন বাড়ি বদলে ধুঁকছি এবার জীবনটাতে ।।


পরমানন্দে আছি বেশ, আজ ছেলে আবার আসবে কাছে,
কিন্তু ওরা কেন শুইয়েছে বরফের ওই সাদা চাদর বিছে ?
শিউরে উঠলাম, মাগো আবার কি বদল হবে নাকি বাড়ির
হঠাৎ কানে বাজল আওয়াজ, চমকে তাকাই ফিরে পিছে।


মা দুহাত বাড়ায় এসে, আয় খুকু আয় আমার পাছে,  
যাব নিয়ে ওই স্বপ্নাকাশে, বাড়ি বদল আর কেন মিছে ।।