বাবা আমার ভীষণ ভালো,  বড্ড ভালবাসে,
দুষ্টুমি করি যখন খুশি, প্রাণ খুলে শুধু হাসে।
আমি নাকি বাবার সোনা মেয়ে, বলত জানো মা,
কি করে যেন নিভল হঠাৎ মা-র প্রাণপ্রদীপটা ।।


মা বিনা পড়ি অথই জলে, আমি কেঁদে কেটে সারা,
দূর আকাশের আলোর মাঝে, নাকি হয়ে আছে তারা।
এখন আমি বড় অনেক, রাতে ভিজাই না আর কাঁথা,
জানো, সেটাই ছিল আমার বাবার প্রথম মিথ্যেকথা ।।


এখন আমি আরও বড়, পড়ি নামকরা এক স্কুলে,
বাবা হল বড়ো অফিসার, তবু যায় না কখনো ভুলে।
সময়মতো পৌঁছে যাই আর আসি বাবার কাঁধে চড়ে,
আমিও ভাবি, কি জাদুতে বাবা এত সময় চুরি করে ?

রোজ দিন থাকে আপিসে মিটিং, তাড়াতাড়িও আসে না,
আমার জন্য ভালো খাবার, তার খিদেও নাকি পায় না।
ঘুম পাড়িয়ে আমায়, মায়ের ফটো নিয়ে কেন কাঁদো ?
এটাও তোমার মিথ্যেকথা, শুধু আমায় ভালোবাসো ।।


হঠাৎ সেদিন বললে টিচার, দেখা হল তোর বাবার সাথে,
কি করে তোর বাবা জানিস? মুটে-মজুর সে রাস্তাঘাটে।
এই না শুনে ক্লাসের সবাই উঠালো অট্ট হাসির রোল,
মিথ্যেবাদী তকমায় পুড়ল শরীর, চোখেও এলো জল  ।।


তাই পরেরদিনই নিলাম পিছু, জানতেই হবে আজ,
বাবা আমায় মিথ্যে বলে, আসলে করে কিসব কাজ ।
সকাল-দুপুর এক করে দেখি, বাবা শুধু শুধুই খাটে,  
কাজ যাই পায়, তাতেই সয়, খাবার জলটুকু না জোটে ।।

সারাদিনের কাজের শেষে, স্যুট, টাইটা নেয় গলিয়ে,
সময় হলে আবার মেয়ের স্কুলে যাবে ঘেমে নেয়ে।
কিন্তু আজ পড়লে ধরা, বাবা তুমি সত্যি কথা বল -
তোর মায়ের স্বপ্ন ছিল যে মেয়েটা হবে অনেক বড় ।।

বাবার মুখের কথা শুনে, আমার আঁখি করে ছলছল,
ভালোবাসো বলেই কি বাবা তুমি মিথ্যে কথা বল।
দিন রাত এক করে আমার, পড়াশুনো তুমি চালাও,
না খেয়ে, মিথ্যে বলে, আমায় নিজের হাতে খাওয়াও ।।


প্রতিজ্ঞা করি আজকে তাই, পড়বো আমি মন দিয়ে,
যা আনবে খাব আমি, শুধু তোমার সাথে ভাগ করে।
সবাইকেই বলতে চাই, তাই যতই হও না সত্যবাদী,
আমার বাবাই থাকবে ভালো, হোক না সে মিথ্যেবাদী।

আমার জন্যই বাবা আজ এই দুনিয়াতে মিথ্যাভাষী,  
মিথ্যাবাদী বাবাকেই তাই আমি সবচেয়ে ভালোবাসি ।।