(১)
সমেশরা ছিল মোট পাঁচ ভাই- বোন,
সমেশই ছিল বড় ছোট চার জন।
ছেলে- মেয়ে পিঠা পিঠি ছোট ছোট সব,
জীবন কি করে যাবে জানে শুধু রব।
এক জনে শ্রম বেচে সাত খানেয়ালা,
বেঁচেও বহন করে মৃত্যুর জ্বালা।
জেগে কাটায় রাত সমেসের পিতা,
কি হবে আগামীতে জানে বিধাতা।
ভাবতে ভাবতে গড়ে অশ্রুর কণা,
কষ্টরা তুলে আছে বিষাক্ত ফণা।
কচু শাক,কলা গাছ,গমের ছাতু,
অভাব ভাত'কে যেনো করেছে জাদু।
ছেলে- মেয়ে কাদে বসে 'ভাত ভাত' বলে,
সাত দিনে এক বেলা ভাত নাহি মেলে।
ক্ষুধার জ্বালা আর সয় না কারও,
ভাত বীনা কাটাবে কত দিন আরও!
দেহী তো নয় ওরা সাত কঙ্কাল,
জাপটে ধরেছে কোন ভাতের আকাল!
সমেশ প্রতি রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবে,
বাবা- মা' র দোষ দিয়ে কি বা লাভ হবে!
ভেবেভেবে দেয় সে অনাহারী ঘুম,
অভাব কপালে তার দিয়ে যায় চুম।
এভাবেই কেটে যায় অগণিত দিন,
দিনে দিনে দেহগুলি হয় যে মলিন।
            (২)
সমেশের মা চিৎকার দিল-সমেশ কই গেলো,
পূব আকাশে সূয্যি মামার ফোটিনি তো আলো।
কান্নার সাথে চিৎকার শুনে পাড়া পড়শি সব,
এক নিমিষেই বাড়িটিতে জুড়ল কলোরব।
কে যেনো বলল-একটা কাগজ পড়ে আছে,
হাতে নিয়ে দেখল সমেশ চিঠি লিখে গেছে।
দু'চার দিন পড়তে যাওয়া ভাঙা ভাঙা হাতে,
সবে মাত্র দুটি বাক্য লেখা আছে তাতে।
"মা তোমরা আমায় নিয়ে চিন্তা কর না,
খোদার রাস্তায় বের হলাম ক্ষুধা যে সয় না।
বুকে চাপড় দিতে দিতে কেদে বাবা বলে,
" কোথায় যাবে,কি করবে অতুটুকু ছেলে!"
গ্রাম বাসী সান্ত্বনা দিচ্ছে বাবা- মা'কে,
দোয়া করো যেথায় থাকুক ভালো যেনো থাকে।
বাবা- মা দুই জনে বুকে পাথর বেঁধে,
দিনাতিপাত করছে তারা বোবা কান্না কেদে!
বয়স তার সবে মাত্র তেরো কি চৌদ্দ,
কিভাবে অভাবের সাথে করবে সে যুদ্ধ!
ভাতের অভাব তার উপর সন্তানের শোক,
বুকের পাথর নামেনা তো থাকতে শত লোক।
দেখতে দেখতে কেটে গেলো কুড়িটি বছর,
আজ অবধি কেউ জানেনি সমেসের খবর।
অনেক কিছু ঘটে গেল কুড়ি বছরে,
অর্ধাহার আর আর অসুখ নিয়ে বাপ-মা গেলো মরে।
বোন দুজনার বিয়ে হলো ভাইরা বাঁধল ঘর,
আজ অবধি সমেশের নেই কোন খবর।
বেঁচে আছে কি সমেশ না কি গেছে মরে,
বাড়ির মানুষ পাড়া পড়শি বলাবলি করে।
কাটল আরও পাঁচটি বছর খোঁজ করে ভাই-বোন,
'সমেশ' নামটি নেয় কেবল গাঁয়ের দু'চার জন।
হঠাৎ শুনি সমেশ দাদা এসেছে ফিরে,
গাঁয়ের অনেক মানুষ তাকে রেখেছে ঘিরে।
দেখলাম তার পাকা চুল পাকা পাকা দাড়ি,
ইনি তবে ছেড়েছিলেন ক্ষুধার জ্বালায় বাড়ি!
হালকা-পাতলা গায়ের বরণ ফর্সা তার দেহ,
কপাল পোড়া ক'দিন পেল বাবা- মায়ের স্নেহ!
বলছেন তিনি-" দিনাজ পুরে এক গেরস্তের ঘরে,
কামলা-কিষাণ খেটেছি তার কুড়ি বছর ধরে।
বউ- সন্তান রয়েছে মোর আছে ভিটে- বাড়ি,
বিঘা পাঁচেক জমি বড় ছেলে সংসারী।
ছোট ছেলে চাকরি করে স্কুলের মাস্টার,
মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে সুখি তার সংসার।"
তবু তার মনের ভিতর অনেক চাপা কষ্ট,
বচন শুনে,চোখ দেখে যায় তা বোঝা পষ্ট।