ময়মুনা তার পঞ্চাশ পেরোনো জীবনে শুধু হারাতেই শিখেছে
এই উপকূলে পানিই জীবন আবার পানিই মরণ
পিতার মতো স্বামীও তার হারিয়ে গেছে ঐ বিশাল অতল সাগরে
অন্ধের যষ্টি ছেলেটাও ভেসে গেছে বানভাসী হয়ে -
সাগরের নোনাজল বার বার চোখের নোনাজল কেঁড়ে নিয়ে চলে যায়।
তবু কেমন এক মায়া পড়ে গেছে তার এই উপকূলের ওপর
তার জীবন যে বাঁধা এই কয়েক মাইলের গন্ডিতেই।
ছানি পড়া আবছা চোখের দৃষ্টিতেই তার কাছে রঙ্গিন লাগে-
অপুষ্টিতে ভোগা দুই নাতনীর মুখ, সরকারী দানের ছাগল জোড়া,
আর বড় আদুরে নিজ হাতে পালা লাল গাভিটা।


ক’দিন ধরেই জোয়ার ভাটার অস্বাভাবিক উত্তাল ভাব
আকাশে অলুক্ষণে ঝঞ্ঝার আভাস-
এই গুমোট ভাবকে চেনে ময়মুনা -মহাপ্রলয়ের আগমনবার্তা।
ক্লান্ত বৃদ্ধা হঠাতই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে - যাবে না সে মাটি ছেড়ে
বিকারগ্রস্থের মতই সে কাছের উঁচু জমিনে ঠাই নেয়-
শাশায় সাগরকে- আকাশকে - বিড়ম্বিত ভাগ্যকে-
পরম মমতায় বার বার জড়িয়ে ধরে তার জীবিত সম্পদগুলোকে।


নির্দয় সাইক্লোন তবু আসে এগিয়ে -জলোচ্ছ্বাস আসে প্রবল উচ্ছ্বাসে
বাতাসের গর্জন এক সময় কান্নার মতো লাগে-
ওদের অন্তিম কান্নাও শুষে নেয় প্রলয়ঙ্করীর ক্ষুদ্ধ বিলাপ।
মূর্ছিতা উপকূলকে বিমূঢ় করে চলে যায় এক সময় বিধ্বংসী অপছায়া-
তারপর , নতুন আলোয় পৃথিবী দেখে অনেকে-
অনেকের প্রাণহীন স্তব্ধ দেহও দেখে অসহায় পৃথিবী ।


ত্রানের হেলিকপ্টার থেকে ফটো -সাংবাদিকের ক্যামেরায়
ফ্রেম বন্দী হলো ময়মুনাদের পারিবারিক শেষ ছবি-
অবলা প্রাণী , মানব শিশু আর এক বৃদ্ধা -
নিস্তব্ধ চরাচরে স্তব্ধ বাতাসে নির্জীব ছড়িয়ে থাকা
ওরা যেন স্থির পটভূমিতে আঁকা জলছবি-
নিষ্ঠুর ধরনীর বুকে নিশ্চুপ মায়ার সংসার ।