বড় সুন্দর করে সে গল্প শোনাতো
তোমার গল্প , আমার গল্প
আমাদের কথা , জীবনের কথা ।


যে জীবন স্রোতে ভাসছি আমরা তার জলরাশির
না বলা কথাই যেন বলে যেত সে-- অবলীলায়
মন্ত্রমুগ্ধ আমরা বিবশ আবেশে নিমজ্জিত হতাম তাতে ।
তাঁর উপন্যাসের উপত্যকায় কেটেছে আমাদের কতো বিনিদ্র প্রহর
অন্তর্গত অচেনা আবেগের সাথে আমাদের পরিচয় তখনই।
মনের বাগানে জ্যোৎস্নার ফুল ফোটাতো সে
বেদনার নীলকে ছুঁয়ে দেখেছি আমরা তাঁরই ক্যানভাসে ।


আজ হারিয়ে গেছে সে কথার ম্যাজিশিয়ান
আমাদের সজল অবিশ্বাসে ফেলে রেখে --
উদ্ভ্রান্ত লিলুয়া বাতাসে তাই অন্তহীন যাত্রায়
পথিক হয়ে হিমু হারিয়ে গেছে অজানায়,
লৌকিক আর অলৌকিকের অপ্রকাশ্য সীমানায় দাঁড়িয়ে
বিভ্রান্ত মিসির আলী আর আসবেন না প্রকাশ্যে ।


নুহাশপল্লীতে শোকের মেঘে ঢাকা আকাশে তাকিয়ে
খুঁজেছি সেই প্রিয় মুখ নির্নীশেষে --
সেখানেই লিচু গাছের নীচে ঘুমিয়ে আছেন তিনি
অনেক অলিখিত পান্ডুলিপি বুকে নিয়ে ।


এই শিউলী ঝরার দিনেই এদেশ পেয়েছিলো
এক স্বপ্নচারী রাজপুত্রকে--
কাজল নামের সেই শিশুটিই একদিন হুমায়ূন আহমেদ হয়ে
বিকশিত হলেন আমাদের ভাবনার জগতে ।


দিকভ্রান্ত জীবনের উত্তাল স্রোতে সাঁতরে চলা
আমাদের তরুন প্রজন্ম পেয়েছিলো জীবনতরীর সন্ধান ,
তাঁর স্নিগ্ধ রুচির মুগ্ধ মায়ায় অবগাহন করে
পবিত্র শান্তি পেয়েছিলাম আমরা ।


আমাদের বনসাই হয়ে থাকা মানস
এক যাদুমন্ত্র বলে মহিরুহের বিস্তার ছড়ায়
মনের বদ্ধ জানালা খুলে আমরা নতুন পৃথিবী দেখি ,
দেখি চিরচেনা চারপাশ নতুন এক আলোয় ।


অন্তরঙ্গ আলোক সম্ভারে যে আমাদের মনকে টেনে নিয়ে যেতো
মায়ার বাঁধনে গড়া পৃথিবীতে ,
রুচির স্নিগ্ধ সুবাসিত বাগানে ,
বেদনার অকুল পাথারে ,
তীক্ষ্ণ রসবোধের সুক্ষ্ম তারে যে বাজাতো মনে তৃপ্তির তানপুরা ,
সেই এক হুমায়ূন আহমেদকে ভোলা যায় না ---


যদি মন কাঁদে
সে আসে অশ্রুধারার মাঝে
সে আসে ঝলমলে স্মৃতির পটে
সে আসে অবিনাশী গান হয়ে
সে আসে যাদুকরী শব্দের চমক হয়ে দুঃখ ভোলাতে ।


কেউ কেউ মানুষের মতো মৃত্যু নিয়ে চোখের আড়াল হয় শুধু ---
যে আলো ছড়িয়ে যায় তার মাঝেই সে তো অমর ~
তবুও কেন যে মন কাঁদে --