সেই রাতটা বড় বিভীষিকাময় ছিল
শ্বাপদ পাক পদাতিকেরা পদানত করেছিল পান্থশালা , জনপদ
নিচ্ছিদ্র আঁধারে বেয়োনেটের খোঁচায় ছিন্ন হয়েছে মানব শরীর
রক্তের স্রোতে পা ডুবিয়ে ডুবেছিলো ওরা উৎসবে  ।
নিরাপদ ঘুমন্ত নিরীহ উঠোনে পড়েছিলো
হতবাক লাশের পাহাড়
নিরস্ত্র শরীরে বুলেটের ক্ষতচিহ্ন যেন
অবিশ্বাস নিয়ে ফুটে আছে বিষন্ন জোছনায় –
বিবস্ত্র নারী-শরীর,ধর্মের দোহাই দেয়া স্বঘোষিত পূণ্যবানদের
পরিচয় জানিয়ে দেয় পরম সত্যতায়।


সেই রাতে অনেক নাগরিক আসলে দ্বিধামুক্ত হতে শিখেছিলো
জেনেছিলো স্বাধীনতা এই ভূখন্ডে অনিবার্য ।
মার্চের সেই রাত্রিতে আগুন জ্বলছিলো শহরে
ক্ষোভের আগুনও ছড়িয়েছিলো মন থেকে মনে
গলি থেকে রাজপথে , শহর থেকে গ্রামে ।
শঙ্কিত মানুষের মনে শক্তি এনেছিল সেই ক্ষোভ
দমনের দহনে দগ্ধ প্রাণে জ্বলে উঠেছিলো
নবচেতনার দীপ্ত মশাল।


সম্ভ্রম হারানো যুবতীরা উর্ধ্বনেত্রে দেখেছিলো সে রাতে আশার সূর্যটা
অশ্রুসিক্ত এতিম শিশুটির বিহ্বল দৃষ্টি পড়েছিলো সে আলোর দিকে
সন্তানহারা পিতার নির্বাক নয়নে ছিলো তার আভা
নিকষ কালো সেই আঁধারের বুকে রক্তিম আভায়
উঠেছিল এক প্রত্যয় সূর্য—
পতাকার বুকে ঠাই করে নেয়া সেই সূর্যটা
আমায় আজও সেই রাতটির কথা মনে করিয়ে দেয়।


আমি কাঁদি শোকে
আমি স্তব্ধ হই স্মরণে
আমি উদ্বেলিত হই গর্বে
আমি পুনর্বার অনুভব করি স্বাধীকারের প্রশান্তি ।


মার্চের সেই রাতে এই দেশে
প্রগাঢ় অন্ধকারে গাঢ় লাল এক সূর্য উঠেছিলো ।