বুকের ভেতর আলোটা জ্বলছিলো
হাড়ের খাঁচা যেন ল্যাম্প-শেড হয়ে তার
উজ্জ্বলতাকে সহনীয় করে তুলেছে --
আমি দেখেছিলাম সে আলোর প্রতিবিম্ব মনের
নিরাকার আয়নায়।
সে রোশনাই কাগজের জমিনে যখন শব্দের
ফুল ফোঁটালো--আমি কবিতার শরীরকে দেখলাম।
মনের নীলাভ মুক্ত আকাশে সুখের শ্বেত-শুভ্র
পংক্ষীরাজগুলোকে রাজসিক উড়তে দেখেছিলাম আমি সেদিন--
আত্মতৃপ্তির গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিলো বাতাসে
মনভূবনের পরিব্রাজক আমি বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখে যাওয়া
চেনা-অচেনার জগতটাকে পুনঃনির্মাণ করতে চেয়েছি
অক্ষরের প্রক্ষেপণে--
সাদামাটা কাগজের বুকে ভাবনার ইতিহাস
এভাবেই লিপিবদ্ধ হয়ে যায়--
সদ্য ভূমিষ্ঠ কবিতার সুতীব্র চিৎকার
আমার চেতনাকে তীব্র নাড়া দেয় ---
আমার বুকের সেই অচেনা আলোর
প্রতিফলন দেখি আমি কাব্যের শরীরে,
পবিত্র কাব্যশিশুর হাত ধরে নেমে পড়ি আমি
চেনা পৃথিবীর পথে ।


[ ওরহান পামুকের জন্ম ১৯৫২ সালে তুরষ্কের ইস্তাম্বুলে। নিজের এবং আপন শহর ইস্তাম্বুলের যুগল আত্ম-কথন ‘ইস্তাম্বুল’ উপন্যাসের জন্যে ২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পান ওরহান পামুক। তুরষ্কের সবচেয়ে পরিচিত এবং বহুল-পঠিত এই লেখক মনে করেন, কবিতা হচ্ছে ঈশ্বরের বচন।কারো ওপর কবিতা ভর না করলে তার পক্ষে কাব্য রচনা সম্ভব নয়।
এক সাক্ষাৎকারে “ আপনি কখনো কবিতা লিখেছেন ?” প্রশ্নের উত্তরে
পামুক বলেন, “ আমাকে প্রায়ই প্রশ্নটি করা হয়। ১৮ বছর বয়সে তুর্কি ভাষায় কিছু কবিতা ছেপেছি। পরে ছেড়ে দিই।বুঝতে পারি কবি হচ্ছেন তিনি, যার মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর কথা বলেন। কবিতা আপনাকে আচ্ছন্ন করতে হবে। কবিতার মধ্যে আপনাকে আবিষ্ট হতে হবে। কবিতা লেখার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এক সময় বুঝলাম, আমার ডাকে স্রষ্টা সাড়া দেন না। খুব মন খারাপ হয়েছিলো। এরপর ভাবার চেষ্টা করলাম, ঈশ্বর যদি আমার মাধ্যমে বলতেন, কী বলতেন তিনি? অনেক ভেবে-চিন্তে, ধীরে লিখে বের করতে চাইলাম ঈশ্বরের ভাব। গদ্য লেখা তা-ই। আমি কেরানীর মতো কাজ করতাম। অনেক লেখক ভাববেন উপহাস করছি। কিন্তু আমি এটা মেনে নিয়েছি। সাহিত্যের ছাপোষা কেরানীর মতো কাজ করি আমি ।”-----সিল্করুট ]