বাবার মিলের চাকরীটা আছে না গেছে
জানা নেই লায়লার, শুনে আসছে অনেক দিন ধরেই
বেতন নাকি বন্ধ ,কয়েক মাস ধরেই--
অভাবের সংসারে খাবারের চাহিদা পরিধেয়র আকাংখাকে
অতিক্রম করতে পারে না কোনদিন।
তাই মলিন জামাগুলো গায়ে জড়িয়ে বড় আড়ষ্ট ভঙ্গিতেই
যেতে হয় তাকে সবখানে।
কুন্ঠিতভাবে বাবাকে বলেওছিল সে বার কতক, “ যদি পারো, বাবা, কোনভাবে ......”


হঠাতই একদিন মুখে বিশ্বজয়ের হাসি নিয়ে বাবা তার হাতে
তুলে দিয়েছিলেন পরম আরাধ্য নতুন জামা--
ঝলমলে জামাটা বেশ পছন্দই হলো লায়লার --আহ,নতুন জামা--
মনে পড়ে বাবা বলেছিলো,“ দেখিস সবাই কেমন অবাক হয়ে দেখবে তোকে ।”
অবাক হয়েই দেখেছিলো সবাই- সে যেন এক অন্য যুগের প্রতিনিধি--
নির্মম মন্তব্য থেমে থাকেনি --আড়ালের নীচুস্বর, উচ্চগ্রামে বিঁধেছিল কানে
“ কি যে পড়ে এসব, খ্যাত, কি ডিজাইন , বিকট রঙ , কি চয়েস !”
আহত চোখে আড় চোখে দেখেছিলো লায়লা ফ্যাশানদুরস্ত কঠিন মনের মানুষদের
নাহ, ক্ষোভ , লজ্জা, গ্লানি কিছুকেই আজ পরোয়া করে না লায়লা
সংকোচ ঘেষা অনুভূতিগুলোকে পরম সন্তুষ্টির পরশ দিয়ে ঘুম পাড়াবে সে-
বাবার গভীর তৃপ্ত অনুভব জড়িয়ে আছে এই ‘খ্যাত’ জামার সূতোয় সূতোয়--
মনে মনে নিজেকে বলে সে,
‘ জানো না তোমরাই,তোমাদের আজকের ফ্যাশান অদূর আগামীতে খ্যাত পোশাকই’।
নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দিয়ে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে নেয় সে নতুন জামায়--
সেই সন্ধ্যায় দরিদ্র এক বাবা বড় আনন্দ চোখে নিয়ে বলেছিলো--
“ কি মা , সবাই খুব সুন্দর বলেছে না নতুন জামা?”
কাঁপা গলায় উত্তর এসেছিলো লায়লার, “ হ্যাঁ বাবা, এমন সুন্দর জামা
এখন এখানে আর কারোরই নেই ।”


নিভৃত নিশীথে , আধুনিক জমানায় বড্ড খ্যাত একটি নতুন জামার ঝলমলে
জমিনে টপটপ করে ঝরে পড়ে ক’ফোটা তপ্ত অশ্রুজল---
হতদরিদ্র এই পরিবারের কেউ তা দেখে ফেললে হয়তো ভাবতো--
‘ কি অদ্ভুত এই মেয়েটা , আনন্দেও কাঁদে ।’