প্রতিদিন সকালে সে দাঁড়ায়
একটি পুরনো আয়নার সামনে—
যার কাঁচে জমে থাকা কুয়াশা
শুধু প্রতিফলিত করে
এক অপরিচিত ছায়ার ক্লান্ত চোখ।
সে ঘষে, মোছে, আবার দেখে—
কিন্তু মুখটা যেন পাল্টে গেছে,
চোখের নিচে কিছু জমাট বিষাদ,
চিবুকের কাছে দায়িত্বের দাগ,
আর ঠোঁটে—
এক চিরস্থায়ী নীরবতা।
সে ভাবে—
“এই মুখটা কি আমার?”
যেখানে কোনো সজীবতা নেই,
নেই সেই আলোর রেখা,
যা একদিন ভালোবাসতে জানতো।
আয়না কোনো উত্তর দেয় না,
শুধু তাকিয়ে থাকে তার দিকে
যেন মেপে নিচ্ছে প্রতিটি ভাঙনের হিসাব,
যে ভাঙন শুরু হয়েছিল এক অবহেলিত বিকেলে,
আর শেষ হতে চায় না আজও।
তার চোখে এখন
স্মৃতি নেই, শুধু স্তব্ধতা।
যেন ভেতরে কেউ একবার
দরজাটা বন্ধ করে গেছে
আর চাবিটা নিক্ষেপ করেছে
সম্ভাবনার সমুদ্রে।
সে এখন আর নিজের চোখে তাকায় না,
কারণ চোখগুলো অনেক কিছু বলে—
সে সব ভাষা তার জানা নেই।
তার মুখে জমে থাকা চুপের নিচে
একটা গোঙানির ভূগোল ছড়িয়ে আছে।
আয়নায় সে দেখছে
না-চেনা এক আত্মাকে—
যে বেঁচে আছে নিছক শরীর হিসেবে,
একটি যন্ত্রণা-কাঠামো,
যার কোনো নাম নেই, চাওয়া নেই, আকুতি নেই।
সে জানে,
একদিন এই আয়নাটাও আর প্রতিফলন দেবে না,
কারণ আয়নাও ক্লান্ত হয়
একই মুখ দেখে দেখে
যেখানে কোনো আশার রেখা নেই,
শুধু অস্তিত্বের ক্রমাগত অবনমন।
আজ সে আয়নার দিকে তাকিয়ে
চুপচাপ বলে—
“তুই কি আমায় চিনিস?”
আয়না ঠান্ডা থেকে ঠান্ডা হয়,
আর ভিতরে থেকে
একটা নীরব আত্মা ধীরে ধীরে
নিখোঁজ হয়ে যায়।
,জূলাই ২, ২০২৫, রাত ১২টা
মিরপুর, ঢাকা