আলোচনা  ১৮৬


দুধরনের প্রেমকে ঘিরে মানুষের অনাকাঙ্খিত আচরন নিয়ে কবি চাঁছাছোলা রচনা করেছেন “ আহাম্মক ধার্মিক ও লম্পট প্রেমিক” শিরোনামে কাব্য। ঈশ্বর প্রেম এবং মানব প্রেম, দুধরনের প্রেমকে নিয়েই চলে নানাধরনের লাম্পট্য কিন্তু কবি খুব সচেতন ভাবে ঈশ্বর প্রেমের প্রতি লাম্পট্যগিরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন “আহাম্মকি” এবং মানব প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন “লম্পট”। শব্দ ব্যবহারে কবি’র সচেতন মূল্যবোধ আমাকে প্রথম শিরোনাম দেখেই আকৃষ্ট করেছে এবং কবিতাটি আলোচনার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে।


একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন দিয়ে কবিতা শুরু হয়েছে। কোন নারী জৈবিক তাড়না, জীবনের নিরাপত্তা, প্রেম এবং আবেগের সম্মান, জীবনের প্রয়োজন ইত্যাদি কারনে যখন একজন পুরুষের সাথে সারা জীবনের জন্য আবদ্ধ হয়, তখন তার সমস্ত মন প্রান, ধ্যান জ্ঞান সেই স্বামীকে ঘিরেই পরিচালিত হয়। কিন্তু যদি সেই স্বামীর লাম্পট্য প্রকাশ হয় (লাম্পট্য মানে অন্য নারীর প্রতি আসক্তি, একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক রাখা, বিবাহ বহির্ভুত অন্য নারীর সাথে শারিরীক সম্পর্ক ইত্যাদি বোঝানো হয়ে থাকে), তখন নারীর জন্য করনীয় কি? একজন নারী সেই প্রক্ষাপটে কি সিদ্ধান্ত নিতে পারে?


১। সে কি তার জৈবিক তাড়না, তার প্রেম... কে টিকিয়ে রাখার জন্য স্বামীর লাম্পট্যকে মেনে নিবে?
২। সে কি নিজের প্রেমকে অক্ষত রাখার জন্য লাম্পট্যের সাথে আপোষ করবে না?
৩। সে কি নিজের সম্মান বজার রাখার জন্য লম্পট স্বামীকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করবে?
৪। সে কি সব কিছুর সাথে আপোষ করবে?


কোন প্রশ্নেরই সঠিক কোন উত্তর নেই। একেক প্রেক্ষাপটে, একেক নারী হয়তো একেকটা উত্তর বেছে নেবে, এশিয়া, ইউরোপ কিংবা পাশ্চাত্য দেশের প্রক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর হবে। কিন্তু নারীর মন কি স্থান কাল পাত্রভেদে লাম্পট্যকে প্রশয় দিতে পারে? এটা একটা সার্ব্জনীন প্রশ্ন।


একই ভাবে ধর্ম পালনের ক্ষেত্রেও নানা ধরনের লাম্পট্য দেখা যায়। একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী, দিনে পাঁচবার সালাত আদায়ের সময় এক আল্লাহর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা, নবী করীম (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ রসুল হিসেব স্বীকার করার পর আবার নানাজনের কাছে হেদায়েত কামনা করা, পীর,মাজার, ফকির... এর দরবারে আশ্রয় নেয়া, এটাও এক ধরনের লাম্পট্য কিন্তু কবি এখানে ভদ্র ভাষা ব্যবহার করে বলেছেন “আহাম্মকি”।


সবচেয়ে ভালো লেগেছে, কবি দুটো প্রেক্ষিতের লাম্পট্যর মধ্যে এক চমৎকার যোগজোগ করেছেন। দুটো ভিন্ন ধরনের লাম্পট্যকে দুটো ভিন্ন শব্দ দ্বারা খুবই ভদ্রতার সাথে মানুষের হীন চরিত্রকে চিত্রায়ন করেছেন।


কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।