আলোচনা ১০৬


অনেকদিন আগে আমি আমার এক লেখায় লিখেছিলাম ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আমার ঈর্ষা হয় কেননা তাদেরকে প্রতিনিয়ত না দেখার ভান করতে হয় না, বাক প্রতিবন্ধীদের আমার ঈর্ষা হয় কেননা তাদেরকে ক্রমাগত নির্লজ্জভাবে মিথ্যে বলতে হয় না ”। আমারা যারা ‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধী নই, আমাদের প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয় বেঁচে থাকা কিংবা টিকে থাকার জন্য, কেউ কেউ লোভের কারনে, জেনে শুনেই অন্যায় করতে থাকি। সে অর্থে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগন’ ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট নিঃসন্দেহে ।


কবি শব্দ মাধুকরী (আরিফুল ইসলাম) এর “আমাকে অন্ধ ও বধির করে দাও” কাব্যে সেই একই সুর বেজে উঠলো।  সমাজের প্রতিটি অনু-পরমানুতে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, শোষণ, হত্যা, জিঘাংসা আর ধংসলীলায় নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের মনে, অন্তরে, একে অপরের সাথে সম্পর্কে আর সেটা ছড়িয়ে পরছে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে, প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠানে, বাদ পড়ছে না পরিবার এবং আপনজনের সাথে নিত্যিদিনের আচার আচরণে । কবি শব্দ মাধুকরীর ক্ষোভ ঝরে ঝরে পড়েছে তার কাব্যের প্রতি লাইনে, প্রতি ছত্রে ছত্রে যেমন- লুপ্ত হচ্ছে আমাদের চেতন, মূল্যবোধ, ক্রমাগত লুট হছে আমাদের চকচকে মেধা, উজ্জ্বল প্রতিভা, শিশুর হাসি এবং প্রতিদিনের স্নিগ্ধ ভোর ।


তোমরা আমার চোখ বেঁধে দাও, আমি আর এইসব দেখতে চাই না কেনন এখানে দূষিত হছে আলো, বাতাস, মাটি, শস্যের বীজ, প্রকৃতি। এখানে ধর্মের নামে আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের ব্যবসা, গনতন্ত্র, আমাদের রাজনীতি কুলসিত করে তুলছে সব। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর গাল ভরা বুলি কেড়ে নিচ্ছে আমাদের ভালবাসার সন্ধ্যা । কবি চিৎকার করে বলেছেন, আমার কানে উত্তপ্ত সীসা ঢেলে চাও, আমাকে বধির করে দাও, আমি আর শুনতে চাই না ঝরাপাতার সিম্ফনি, বন্ধ্যা নদীর চিৎকার আর ধর্ষিতা জননীর আর্তনাদ। আমি শুনতে চাই না জলের অনুনাদ, বোবা পাহাড়ের কান্না,স্বপ্নের ইশতেহার ।


কবিতার রন্ধে রন্ধে লুকিয়ে আছে এক বোবা কান্না, এক আর্তনাদ, এক অসহায় আকুতি এবং তার সার্বিক বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কবিতার শিরোনাম “আমাকে অন্ধ ও বধির করে দাও” এর মধ্যেই।


অসাধারণ এক কাব্য  উপহার দেয়ার জন্য কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।