আলোচনা ৯৪


এই প্রথম কোন গদ্য কবিতা আলোচনা করার চেষ্টা করলাম। ব্যক্তিগতভাবে বক্তব্য বিহীন শুধু ছন্দের ঝঙ্কার জাতীয় কবিতা আমার ভাল লাগে না, সে তুলনায়, ছন্দের ঘাটতি থাকে কিন্তু অসাধারণ বক্তব্য নির্ভর কবিতা আমাকে খুব টানে। প্রতিদিন আসরের পাতায় প্রকাশিত খুঁজে খুঁজে সেই কবিতা গুলোই পড়ি। ভাবনার জগতে নিজেকে একাত্ম রাখি, নুতন ভাবনায় অন্যকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করি, এভাবেই একে একে ভাবনারা ছড়িয়ে পড়ে।


তবে, গল্প আকারে লেখা গদ্য কবিতা নিয়ে আমার খুব বেশী জানা শোনা নেই। শফিকুল ইসলাম শাফিক এর ‘আমরা লাশ’ কবিতাটি অল্প কথায় অনেক গভীর বক্তব্য তুলে ধরেছেন, সে কারনেই আলোচনার জন্য নির্বাচন করা, সেই সাথে নিজেকে এই জাতীয় কবিতা আলোচনার জন্য আরও পরিশিলিত করাই মূল উদ্দেশ্য।


আমরা কেন নিজেকে ‘লাশ’ ভাবতে শুরু করবো, প্রথম প্রশ্ন মনে তৈরি হয়েছিল কবিতার শিরোনাম দেখেই। লাশ শব্দ ব্যবহার হয় মৃত্যুর পরে, বেঁচে থাকলে কি কেউ লাশ হয়?? আজকাল হয়, যাকে আমরা বলি ‘জিন্দা লাশ” বলি, জীবিত থেকেও কেন আমাদের লাশ হতে হয়? আমাদের ধ্যান, জ্ঞানে, চলনে বলনে, স্বপ্নে, অপেক্ষায় শুধুই ‘লাশ ভাবনা’ কেন?? কবি স্পষ্ট উচ্চারনে ‘লাশ’ অর্থাৎ ‘জিন্দা লাশ’ হওয়ার কারন ব্যাখা করেননি কিন্তু পাঠককে ভাবনার জগত তৈরি করে দিয়েছেন।


একটি রাষ্ট্র, দেশ, সমাজ, গোষ্ঠী যখন তার নৈতিক অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয় তখন মানুষকে তার মর্যাদার আসন থেকে দেখে না, মানুষ কেবলই তার স্বার্থ চরিতার্থ করার যন্ত্র, ফলে মানুষের মরা বাঁচা তার কাছে আর গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় বরং মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা, অর্ধ মৃত রাখা কিংবা লাশ বানিয়ে রাখা সব ক্ষেত্রেই, পেছনে উদ্দেশ্য থাকে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ। সভ্যতার এক অসভ্য সময়ের বসবাসে মানুষের ভাবনায়, মননে কেবল লাশ আতঙ্ক ঢুকিয়ে দেয়া হয় ফলে মানুষ লাশ ভিন্ন অন্য ভাবনা দ্বারা চালিত হতে পারে না।


ঘুম থেকে উঠে, দিনের শুরু হয় লাশ দেখে, শেষ হয় লাশ দেখে। এখানে লাশ কেবল আক্ষরিক অর্থেই রক্ত মাংসের মানুষের লাশ নয়, লাশ এখানে অনেক গভীর এবং বড় পরিসরে দেখার জন্যিই এই কবিতা। লাশ মানে, বিবেক বর্জিত কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের ন্যায্য অধিকার হরণ, অমানবিক আচরণে মানুষকে অমর্যাদার আসনে রাখা, অত্যাচার অত্যাচারে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলা...... পুরো দেশ জুড়েই জেন ‘লাশ আর লাশ’।


অল্প কথায় এত গভীর বক্তব্য ধারণ করা সত্যিই এক অসাধারণ দক্ষতা !! কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা।