আলোচনা ১০৮


বেশ মজার একটি শিরোনাম “এক‌টি অংক বি‌রোধী ক‌বিতা” দিয়ে কাব্য রচনা করেছেন কবি ফারহাত আহমেদ।‘অংক’ মানে হিসেব নিকেষ, চুল চেরা বিশ্লেষণ, লাভ-ক্ষতির হিসেব কিংবা চাওয়া-পাওয়ার ক্ষতিয়ান। জীবনকে পরিচালিত করার জন্য অংকের প্রয়োজন, জীবনের জন্য অংকের প্রয়োজন কিন্তু অংক দিয়ে জীবনকে গ্রাস করার জন্য নয়। ধারণা করি, এটাই কবিতার মুল বক্তব্য। আমি নিজে যেহেতু অংকের সমীকরণে জীবনকে দেখার চেষ্টা করি না, তাই হয়তো বা কবিতাটি মনকে নাড়া দিয়েছে। কাব্যের মাধুর্যের ঝলকানি অপেক্ষা রিয়ালিজম এবং দর্শন ভিত্তিক কবিতা আমাকে খুব টানে ।


“কেউ কেউ দে‌খি অংক কর‌ছে প্র‌তিটা কদম ফেল‌তে,অভ্যাসটাই বদ্ বদ্ লা‌গে ম‌নের জানালা মেল‌তে”, জীবনের সার্বক্ষণিক যদি অংক কষা হয় তবে আর জীবনের কোন ছন্দ থাকে না, মাধুর্য থাকে না, সুকুমার বৃত্তি লোপ পেয়ে রোবট জীবনে রূপান্তর হয়। মানবিক জীবন সব সময় সমীকরণ মেনে চলে না, হিসেব নিকেষ বিহীন কিছু সময় জীবনের ভিন্ন এক সৌন্দর্য। জীবনের জন্য অংক প্রয়োজন নিঃসন্দেহে কিন্তু আবার জীবনের জন্যই অংকবিহীন সময় দরকার। কবি একটি উদাহরন দিয়েছেন- “
“যেমন ধ‌রো আমার প্রে‌মিকা হয়‌তো আম‌লে নেয় নি, গু‌নে গু‌নে দি‌লো দুইবার ফোন,তারপ‌রে আর দেয় নি......‌হৃদ‌য়ের কোন অলিহ‌তে গ‌লি‌তে পাল্লা পাথর চাই না”, এখানে প্রেমিকা হয়তো অংক কষেছেন দু’বার তো ফোন দিয়েছি, এবার ওপর পক্ষের পালা, সমীকরণ হিসেবে আমি দু’বার ফোন দিলে অপর পক্ষের দু’বার ফোন দেয়া উচিত, কিন্তু বাস্তবতা হয়তো ভিন্ন হতে পারে, অপর পক্ষের ফোন দেয়ার ইচ্ছে হলেও দিতে পারছিল না, হতে পারে তার ব্যলেন্স ছিল না, ঐ মুহূর্তে রিচারজ করার পরিস্থিতিও ছিল না, ফলে অংকের সমীকরণের কারনে আর কথা হল না, জীবনের সুন্দর এক মুহূর্তের অপচয় হয়ে গেল অথচ কিছুটা অংক ফেলে, হৃদয়ের টানে প্রেমিকা আরও একবার ফোন করলে দু’জনের জন্যই মুহূর্তটি হয়ে উঠতো উপভোগ্য। আরও অসংখ্য উদাহরন দেয়া যেতে পারে কিন্তু মূল বিষয় হোল ‘জীবনের প্রয়োজনেই কখনো কখনো অংকবিহীন থাকা দরকার”


চমৎকার এক বাস্তবমুখী কাব্য  উপহার দেয়ার জন্য কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।