আলোচনা ১২৮


আমরা এক কঠিন সময় অতিক্রম করছি সবাই, নানা অর্থেই কঠিন এবং দুঃসময়। শুধু কোভিড-১৯ বলে না, পুজিবাদি সমাজ কাঠামো এবং বিশ্ব ব্যবস্থায়, আমরা অনেক বেশী ভোগবাদি হয়ে উঠছি দিন দিনই। নিজের উন্নতি, নিজের ক্যারিয়ার, নিজের সম্পদ, নিজের গাড়ী, বাড়ী এসব নিয়েই ব্যস্ত। আজকাল আমরা যখন নিজেকেই নিজেরা সময় দিতে পারি না, তখন পরিবারকে আর সময়  দেয়ার, সময়ই থাকে না। আর অন্যকে সময় দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু প্রতিটি মানুষ কোন না কোন দুঃখ, যন্ত্রনা, কষ্টের মধ্য দিয়ে কোন না কোন সময় পার করে, কেউবা বেশী কেউবা কম। জীবনের গতিপ্রকৃতিই এমন।


এমন কোন সময় আসে যখন মানুষ তার যন্ত্রনাগুলো শুধু শেয়ার করতে চায় অন্যের কাছে। কিন্তু আমরা সেই মানুষ  খুঁজে পাই না, আস্থা পাই না, কাউকেই পাই না যে একটু সময় নিয়ে কষ্টের এবং যন্ত্রনার কথাগুলো শুনবে। অন্যের কাছে নিজের কষ্ট শেয়ার করতে চাওয়া মানুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বেশী লড়াই করতে হয় এখানেই। প্রথম লড়াইটা শুরু হয় নিজের এই সহজাত প্রবৃত্তির সাথেই।


কবি সরদার রহমাত ঠিক এরকম এক প্রেক্ষিত নিয়েই রচনা করেছেন “অজানা প্রশ্নের উত্তর”। কবিতাটি ভালো লাগা এবং আলোচনা করার বিশেষ একটি কারন হলো, সম্প্রতি বেশ কিছু বই পড়েছি এবং পড়ছি অনেকটা এই জাতীয় প্রেক্ষিত নিয়ে। ফলে কবিতাটি তাৎক্ষনিকভাবেই বেশ আঁচড় কাটলো মনে।


কবিতার শুরুটা হয়েছে, নিজের কাছেই প্রশ্ন রেখে, অনেকটা আত্মসমালোচনা, অনেকটা হতাশাকে কেন্দ্র করে, জীবনের সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, কিছু ভুল তো হয়েছেই, সেগুলো এখনো শোধরানো হয়নি, কিভাবে শোধরানো যাবে, জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত, দুঃখ বেদনা সংকীর্ণতা ইত্যাদি নিয়ে।


কিন্তু কারো কাছেই কিছু শেয়ার করতে পারছেন না, নিজের সমস্যা সমাধানের জন্য, পথ খোঁজার জন্য অনেক সময়ই অন্যের পরামর্শ দরকার হয়। কিন্তু সবার আগে দরকার, কেউ একজন তার কথা মন দিয়ে শুনুক, মনের গভীরে লুকিয়া থাকা, কষ্টের ভার প্রথমে একটু হালকা হউক। কিছু বর্তমান ব্যস্ত জীবনে সেই মানুষও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে একদিকে নিজের সমস্যা নিয়ে হাবুডুবু খাওয়া আবার বলতে না পারার যন্ত্রনা-দ্বিমুখী এক কষ্টদায়ক প্রেক্ষিত নিয়েই পুরো কবিতা।


আমার কাছে কবিতাটি ভালো লাগার আরেকটি বড় কারন হলো, আমাদের মনের এক সাইকোলজিক্যাল প্রেক্ষিত নিয়ে পুরো কবিতা চিত্রায়ন করা হয়েছে, আমার মূলত কোন থীম বেজড কবিতা বা শর্ট ফিল্ম বেশী ভালো লাগে।


কবির জন্য রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা।