আলোচনা  ২০৬


অতিরিক্ত, বাহুল্য এর মাপকাঠি কি? কে বা কারা ঠিক করবে? কি কি মানদন্ড থাকবে তাতে? সকল ক্ষেত্রেই কি অতিরিক্ত বা বাহুল্যের একই রূপ হবে? মৌলিক কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। আলোচ্য কবিতায়, কবি মৌলিক প্রশ্নগুলোকে আমলে না নিয়েই উপসংহার টেনেছেন। গতানুগতিক বাস্তবতার মাপকাঠিতে, প্রচলিত মানদন্ডে এবং অযথা ঝুটঝামেলা এড়া্তেই সরল সমাধান খুজেছেন “বাহুল্য সমাচার” কাব্যে।


কিছু উদাহরন দিয়ে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে-
অতিরিক্ত কথা বলা, তর্ক করা, দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়া কিংবা অতিরিত ভোজন, অতিরিক্ত ঘুম। আরো কিছু উদাহরন হতে পারে, অতিরিক্ত অবহেলা, তোষামোদ কিংবা অতিরিক্ত ভালোবাসা, ঘৃনা, অতিরিক্ত মোহগ্রস্থতা ইত্যাদি ইত্যাদি।


এখন, কতটুকু হলে পরে তা অতিরিক্ত হবে তা বোঝার উপায় কি? সেটা কোথাও লিখিত নেই। কম-বেশি কিংবা অতিরিক্ত মাপার কোন যন্ত্রও আবিস্কার হয়নি। মূলত “অতিরিক্ত” ব্যাপারটিই নির্ভর করে প্রেক্ষিত বিবেচনা, সমাজ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, প্রচলিত, বংশ পরম্পরায় চলিত, শিক্ষা, ধর্ম ইত্যাদি নানাবিধ অনুসঙ্গের সংমিশ্রনে। একক কোন উপদানের মাধ্যমে “অতিরিক্ত বা বাহুল্য” নির্ধারন হয় না। আবার এসব বিবেচনাও ব্যক্তির নিজস্ব বিবেচনা বোধ এবং অন্যের গ্রহনযোগ্যতার মাপকাঠিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে। ফলে পুরো ব্যাপারটাই এক ধরনের গোলমেলে হয় যদি খুব বেশী তাত্ত্বিক ভাবে ভাবতে শুরু করি। অন্যথায় প্রতিদিনের অভ্যাস বশত আমারা “অতিরিক্ত বা বাহুল্য” বিষয়টি খুব সহজেই নির্ধারন করতে পারি এবং করে থাকিও। কবি মূলত এক ধরনের ‘বানী চিরন্তনী’র” মতো করে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে।


কবি, অতিরিক্ত বা বাহুল্য বর্জনে কিভাবে আমরা প্রতিদিনের জীবন যাপন সহজ হতে পারি তার একটি সহজ সরল ফর্মুলা, ছন্দের তালে ব্যক্ত করেছেন-


অতিরিক্ত দোষের কিছু নয় কিন্তু সর্বক্ষেত্রে হয়তো গ্রহনযোগ্য নাও হতে পারে সেটা খেয়াল রাখা দরকার। কখনো কখনো অতিরিক্ত কিছু গ্রহনযোগ্য হতে পারে কিন্তু বর্জনে তা অধিক ফলপ্রসু।


যেমন- অতিরিক্ত যৌক্তিক হওয়া, কোন কোন প্রেক্ষিতে বা ব্যক্তির কাছে যৌক্তিক তর্ক গ্রহনযোগ্য, এমনকি খুবই পছন্দনীয় আবার কারো কাছে সেটা অপছন্দের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে বিষয়টি গ্রহনযোগ্য হলেও কখনো কখনো তা বর্জনে অধিক ফলপ্রসু হয়। আমার ব্যক্তি জীবন থেকে উদাহরন দেয়া যেতে পারে, প্রফেসনাল জায়গায়/কর্মক্ষেত্রে আমি অনেক বেশী যৌক্তিক, কিন্তু এই আচরন যখন ভিন্ন কোন দেশে (পশ্চিমা দেশে) কাজ করতে গেছি, সেখানে সুপারভাইজার এর কাছে খুবই প্রশংসনীয় ছিল কিন্তু একই আচরন বাংলাদেশের (প্রাচ্যে) কোন সুপারভাইজার এর কাছে তা সহজে গ্রহনযোগ্যতা পায়নি রবং অপছন্দনীয় ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়েছে। এই উদাহরনে, কতটুকু যৌক্তিক তর্ক, অতিরিক্ত/বাহুল বলে বিবেচিত হবে তা প্রেক্ষিত বিবেচনার সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে হয়েছে/হচ্ছে।


কোন কিছু অতিরিক্ত বা বাহুল্য হলে সেটা কখনো, ধিকৃত, বিকৃত, নিগৃহীত কিংবা স্বীকৃত, সবটাই হবার সম্ভাবনা থাকে, খুবই বাস্তব। আমাদের প্রতিদিনের জীবন প্রনালীতেই তা দেখা যায়। সংসার, সমাজ, অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ  সকল জায়গায়ই বিষয়টি মনে রাখতে হয়।


কবিতাটি ভালো লাগার একটি বড় কারন হলো, কবিতার ইস্যু নির্বাচন। আমাদের প্রতিদিনের, প্রতিটি মানুষের একটি প্রধান সমস্যা (বলা যায় একটি জাতীয় ইস্যু), অতিরিক্ত বা বাহুল্যের সীমারেখা নির্ধারন করে, পারিপার্শিকতার সাথা খাপ খাইয়ে চলা, এটা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় অনেকের কাছেই (কারো কারো কাছে হয়তো বিষয়টি খুবই সাধারন এবং সহজবোধ্য বিষয়)

কবি’র জন্য রইলো শুভচ্ছা