আলোচনা  ১৮৫


ছোট কবিতা, অনু কবিতা আমার বরাবরই প্রিয়। অনেক শব্দে অনেক কথা সবাই বলতে পারে কিন্তু শব্দের অল্প সীমানায় বিশালতা ধারন করা একটু কঠিন। সীমানা ভেদ করে ভাবনার অসীমের পানে ছুটে চলা যেন বা ছোট কবিতার নেশা, আমি সেই নেশায়ই আসক্ত থাকি। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠার জুড়ে কবিতা পড়া আমার কাছে সময়ের অপচয়, উপন্যাস পড়া ঢের ভালো মনে হয়। যে কারনে প্রচুর ছোট কবিতা, অনু কবিতা পড়ি, তন্ময় হয়ে থাকি কিছুক্ষন, ভাবনার জগতে দীর্ঘ ভ্রমন করি, ফিরে আসি, অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে এবং সেখানেই তৃপ্তি খুঁজে পাই।


আমরা হরহামেশাই বলে থাকি, নিজেদের জীবন অভিজ্ঞতাও সেরকম “জীবন থামে না কারো জন্যই” খুবই সাধারন বক্তব্য কিন্তু খুব সাধারন বক্তব্যকে অসাধারন করে তোলো, “বদলে যায় তার স্রোত” এবং “বদলে যাওয়া স্রোত উৎপন্ন করে বিদ্যুৎ কিংবা বন্যা”।


এই একই বক্তব্য ধর্ম গ্রন্থ, মোটিভেশনাল স্পীকারগন, দর্শন, ধর্মগুরু, আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের অভিজ্ঞ অভিভাবকগন নানাভাবে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে ব্যাখা করে থাকেন। সময় এবং জীবন সমান্তরাল ভাবেই বয়ে চলে, কারো জন্যই তা অপেক্ষা করে না, থেমেও থাকে না। প্রকৃতির এই অনংঘনীয় নিয়মকে আমরা অনেক সময় গায়ের জো্রে পরিবর্তন করতে চাই। ভাবনার জগতে ভুল সিগনেল/সংকেত দিয়ে থাকি, পৃথিবীর সমস্ত ভালো কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে রাখি এবং নিজেকে ছাড়া সবকিছু অচল ভাবতে শুরু করি আবার অন্যভাবে অন্যের উপর নিজের ভালো থাকা, মন্দ থাকাকে নির্ভরতার ছায়ার রাখি। দুটোই ভুল পরিক্রমা। আমি নিজে প্রকৃতির অতি ক্ষুদ্র এক কণা মাত্র (প্রায় অদৃশ্যমান), আমার কারনে অন্যের জীবনে ভরপুর সুখ কিংবা অন্যের অভাবে আমার নিজের জীবন শুন্যতায় ছেয়ে যেতে পারে না। সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে সময়, আমাদের যতো আবেগ, আবেদন, উল্লাস, উচ্ছাস... সবই একটি নির্দিষ্ট সময়ের চাহিদা মাত্র, এর বেশী কিছুতো নয়।


কবি শাওন সানা (দিপু) তার “বিচ্ছেদ” কাব্য সে কথাই বলতে চেয়েছেন, শব্দের অপচয় না করেই। মাত্র ২৩টি শব্দ ব্যবহার করে ৫লাইনের কবিতায়, জীবনের এক বাস্তব দর্শনকে উপস্থাপন করেছেন। যদিও কাব্যের শিরোনাম “বিচ্ছেদ” আমার নিজের খুব একটা পছন্দ হয়নি, খুব গতানুগতিক একটি শব্দ যা কবিতার ভাব গভীরতাকে ধারন করতে পারেনি।


কারো জন্য আমাদের আবেগ, উচ্ছাস, আকাংখা... থাকবেই, কিন্তু একই সাথে সত্য, পাওয়া মানেই হারানোর সম্ভাবনাও থাকে।  চাওয়ার সময়ই না-পাওয়ার সম্ভাবনাকে নিজের মাঝেই লুকিয়ে রাখতে হয়। হারাবার বেদন, জীবনে ছন্দপতন হতেই পারে কিন্তু ছন্দপতনে “বিদ্যুৎ” কিংবা “বন্যা”, কোনটা প্রবল হবে তা অনেকটাই নির্ভর করে নিজের উপর, নিজের উপর নিয়ন্ত্রন ক্ষমতার উপর।


জীবনের এক চরম বাস্তবতা হলো, সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে ফলাফলের উপর নিজের নিয়ন্ত্রন বজায় রাখা খুব জরুরী, অন্যথায় প্রবল বন্যায় ভেসে যেতেই হবে।