আলোচনা  ১৪৮


এক সন্তানের রক্তক্ষরনের গল্প নিয়ে লেখা কবিতা যার জন্মের আগেই বাবা গুম হয়ে গিয়েছিলো। যে সন্তানের বুকের দহন, দগদগে ঘা, চোখের অশ্রু দিয়ে জন্ম হয়েছে এবং এখনো টিকে আছে ‘গুম’ নামক শব্দটি। যে শব্দের কোন আইনগত ভিত্তি নেই, যে শব্দে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, যে শব্দ এক সন্তানের হাহাকার, যে শব্দ সারা জীবনের কান্না, তা আজোও টিকে আছে, এই সভ্য সমাজে নিজের দম্ভ নিয়ে। আমরা কি করে নিজেদের সভ্য দাবী করি? যেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, যেখানে বাবার কবর দেখার সৌভাগ্য হয় না কোন সন্তানের, যেখানে এক সন্তান কতোটা কষ্ট বুকে নিয়ে বলতে পারে-


“আমি বাবাকে ফেরত চাই,জীবিত দিতে না পার, লাশটাকে দাও, লাশ দিতে না পার দেহাবশেষ দাও, দেহাবশেষ দিতে না পার,যে মাটিতে রেখেছ, সেই মাটি দাও। নুতন করে দাফন করব বাবাকে বুকের ভিতর। এখানে রয়েছে খোঁড়া আমার বাবার কবর”।


ভাবা যায় এই কষ্টের তাপ কতটা? অনুভব কি করা যায়? আমরা সভ্য মানুষেরা কি বুঝতে পারি ঐ সন্তানের বুকের ভেতরে কি ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত? আমাদের সেই মনুষত্য কি এখনো বেঁচে আছে?


এ রকম এক বাস্তবতায় কবি আহাবুবা বিথী লিখেছেন “ বুকের ভেতর বাবার কবর”, কবিতাটি পড়তে পড়তে পাঠকের চোখের অশ্রু গাল বেয়ে পড়বে না, তা কি করে হয় !!! কবি কিংবা কবিতা পাঠক তো খুবই অনুভূতি প্রবন হয়ে থাকে, বুকের ভেতর থেকে নিংড়ে উঠা আর্তনাদ এই কবিতা।


গুম হয়ে যাওয়া সন্তান, রাষ্টের কাছে নিজের বাবার কবরস্থান আর নিরাপদ মনে করে না, যদিও আদৌ কবর আছে কি না, তাও জানে না। তবুও আশা করে, লাশ না পাক, দেহাবশেষ না পাক অন্তত কবরের নামে একটু মাটি তাকে দেয়া হউক, সেটা দিয়েই সে তার বাবাকে বুকের ভেতর করব বানিয়ে রাখবে আজীবন। যে কোন রাষ্টের কাছে, সাধারন মানুষ কতোটা অনিরাপদ ভাবলে, নিজের দেহের ভেতর স্বজনদের কবর বানাতে চায়, কবরকে নিরাপদ রাখতে চায়!!!!


বাবা কেন গুম হলো? কি তার অপরাধ ছিল? অপরাধ যদি হয়েই থাকে তবে বিচার না করে কেন গুম করা হলো? কেন তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হলো না? কেন সে জন্মের পর অন্য সব সন্তানের মতো সে তার বাবা’র মুখ দেখতে পেলো না? তার কি অপরাধ? কেন তাকে বাবার স্নেহ মমতা থেকে বঞ্চিত করা হলো? কেন তার মা বিধবা হলো? এসব অসংখ্য প্রশ্ন তার মনে আছে, তার জবাব সে পাবে না সেটাও জেনে গেছে এরই মধ্যে, এখন শুধু বাবার কবর নিজের বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখতে চায়, এটাই তার শেষ ইচ্ছে। ভাবা কি যায়, অনুভূতিতে কি আনা যায়? একজন নাগরিকের রাষ্ট্রের কাছে কতো কি চাওয়ার থাকে কিন্তু এই সন্তানের চাওয়াটুকু কি? আমরা কি ভাবতে পারি, কতটুকু নূন্যতম চাওয়া নিয়ে একজন নাগরিক হিসেবে সে একটি রাষ্ট্রে বসবাস করছে!!!!!


এই কবিতা নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করার কিছু নেই, কবিতা নিজেই সব বলেছে, নিজের মতো করে, নিজের কষ্টের কথা, নিজের হাহাকার, নিজের দহন, নিজের রক্তক্ষরনের কথা।


কবির প্রতি রইলো অফুরান শুভেচ্ছা, অসাধারন একটি কবিতা আমাদের উপহার দেবার জন্য।