আলোচনা ৬০


মানব সভ্যতার গোঁড়া থেকেই ব্যবধান, বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা... রয়েছে কিন্তু তারপরও যুগে যুগে মানুষের হাহাকার রয়েছে। বৈষম্যের শিকার যারা হয়েছেন তাদের মধ্যে তো রয়েছেই কিন্তু বিবেক তাড়িত হয়ে অন্যরাও এই ব্যবস্থার অবসান চান, আর রচনা করেন নিজ নিজ জায়গা থাকে নানা কীর্তি, ক্রমাগতই চীৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। একজন ফটোগ্রাফার ছবি তুলেন, অত্রালিকা এবং বস্তি পাশাপাশি, একজন কবি কবিতা লিখেন ‘ব্যবধান’ কিংবা একজন চিত্রশিল্পী ছবি আকেন ‘দুর্ভিক্ষ’। এভাবেই যুগে যুগে মানব সভ্যতার ক্ষত হিসেবে টিকে আছে বৈষম্য কিংবা মানুষে মানুষে ব্যবধান। আদিম সমাজ থেকে শুরু করে সাম্যবাদ হয়ে পুঁজিবাদ, ব্যবধান দূর হয়নি। মানব সভ্যতার নানা পর্বে মানুষ নানাভাবে চেষ্টা করেছে ব্যবধান দূর করার ফর্মুলা আবিষ্কার করতে কিন্তু আজও সঠিক কোন কোন পথ খুঁজে পায়নি। মানুষেরই তৈরি বৈষম্য মানুষের পক্ষেই দূর করা সম্ভব হচ্ছে না।


কবি মাহমুদুর রহমান খাঁন আবারো চেষ্টা করেছেন “ব্যবধান’ কবিতায় মানুষে মানুষে ব্যবধানগুলো তূলে ধরে মানব বিবেককে জাগ্রত করে তুলতে। কিন্তু বিষয়টি আসলে কোন ব্যক্তি কিংবা কিছু মানুষকে সচেতন করার বিষয় নয় বরং এটা একটা বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা দূর করা কোন সহজ কাজ নয়, হাজার হাজার বছর ধরে চেষ্টা চলছে, আরও হাজার বছর হয়তো চলবে কিংবা সীমাহীন সময় ধরেই চলবে।  তাই বলে কি কবি কবিতা লিখবে না? অবশ্যই লিখবে কিন্ত তার আবেদন কার কাছে, কতটুকু থাকবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়।


তবে, কবি ব্যবধান কে স্পষ্ট করে তুলবার জন্য বেশ কিছু বাস্তবভিত্তিক উদাহরন তুলে ধরেছেন-


“আমার মুখে কোরমা-পোলাও, তোমার মুখে ভাত আমি থাকি রাজপ্রাসাদে, তুমি রাস্তায় কাটাও রাত। আমার বাড়ির বৃহৎ প্রাসাদ উঁচু পাঁচতলা, তোমার বাড়ি মাটির সাথেই নিচু গাছতলা। আমার পরণে সুন্দর জামা,শার্ট, কোট-প্যান্ট, টাই। তোমার পরণে শতছিন্ন বস্ত্র জামা-জুতার ঠিক নাই। আমার গ্যারেজে চার চাকার, দামী মডেলের গাড়ী, তোমার নেই চার চাকা তাই হেঁটেই ফিরো বাড়ি......” ইত্যাদি।


সবশেষে ইচ্ছে করেই, আলোচনার জন্য কবিতাটি নির্বাচন করেছি। কবিতার ব্যাকরণ বিবেচনায়, কবিতাটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল কবিতা কিন্তু বক্তব্য বিবেচনায়  কিংবা উপযোগিতা  বিবেচনায় কতটুকু পাঠকের মনে রেখাপাত করতে পারবে সে ব্যাপারে পাঠকের মনে আরেকবার প্রশ্ন তৈরি করবার জন্য।


আসরে কবিকে স্বাগত জানাই, সবেমাত্র নুতন আগমনকে আজকের আলোচনা দিয়ে আরও উৎসাহিত করতে চাই।


কবির জন্য রইলো আসংখ্য শুভেচ্ছা।