আলোচনা  ১৬৪


ধর্ম বিষয়কে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে চার রকম মানুষ দেখা যায়ঃ


১। আস্তিক (Theist)- যারা ধর্ম বিশ্বাস করে এবং ধর্মের অনুশাসন মেনে চলে
২। নাস্তিক (Atheist)- যারা কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না
৩। অজ্ঞেয়বাদ (Agtosticist)-যারা বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাস কোনটাই করে না
৪। নির্বিকারবাদ (Irrelativist)- যারা মনে করে, ধর্ম দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় নয় ফলে এটা নিয়ে আলোচনার কিছু নেই, তারা সব সময় ধর্ম বিষয়ে নির্বিকার।


এছাড়া আরেক ধরনের মানুষ আছে যারা জন্মগতভাবে কোন না কোন ধার্মীক পরিবারের জন্মগ্রহন করছেন কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষন করেন।


যে কোন ধর্ম, বিশ্বাস করবো কি করবো না, মানবো কি মানবো না, সেটা একান্তই প্রত্যেকের নিজস্ব ব্যাপার, এখানে কোন বাধ্যবাধকতা নেই, থাকার কথাও নয়। কিন্তু তবুও আমরা কখ্নো কখনো বাধ্য হই, বাধ্য করা হয়, সেটাই মূল সমস্যা।


ধর্মকে কেন্দ্র করে তিন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়-


১। ধর্ম এবং ধার্মিক মানুষ, দুয়ের মধ্যে গোল পাকিয়ে ফেলা। কোন মানুষকে ধর্মের মডেল বিবেচনায় নিয়ে ধর্মকে বিচার করা। ধর্মের নীতিমালা কোন একজন মানুষ পুরোপুরি ফলো নাও করতে পারে, সেটা তো ধর্মের মাপকাঠি হতে পারে না। ধর্মকে মাপা হবে, ধর্মীয় গ্রন্থ এবং তার নীতিমালা দিয়ে। আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিস্কার করেছেন, সেই ডিনামাইট এখন যুদ্ধে মানব হত্যার জন্য ব্যবহার হয়। তাই বলে ডিনামাইট আবিস্কার তো খারাপ হতে পারে না, সমালোচনা হতে পারে ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা প্রায়শই এখানে ভুল করে ফেলি।


২। একই কাজ বা একই ভুল সাধারন মানুষ এবং ধার্মিক মানুষ করলেও, শেষ পর্যন্ত ধার্মিক মানুষকেই সমালোচনা করা হয়। ভুলকে, ভুল হিসেবেই বিবেচনা করা দরকার, সেটা সাধারন যেমন করতে পারে তেমনি ধার্মীক মানুষও করতে পারে। কিন্তু আমাদের যতো সমালোচনা শুধু ধার্মীক মানুষদের বিরুদ্ধে।


৩। ধর্ম এবং মানবতা কে আলাদা করে দেখা। পৃথিবীর কোন ধর্মই “মানবতার” বাইরে নয়। কিন্তু আজকাল স্যাকুলার দৃষ্টিভঙ্গি “ধর্ম” এবং “মানবতা” দুটিকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা করে থাকে। ধর্মের মধ্যেই মানবতা থাকে আবার মানবতার মধ্যেই ধর্ম থাকে।


উপরোক্ত তিন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গীর কারনে, ধর্ম, মানবতা, মানুষ ইত্যাদি আলাদা আলাদা মনে হয় কিন্তু আদতে তিনটি একসূত্রেই গাথা, প্রায়োগিকতার ভুলের কারনে, অনেক উদাহরন তৈরী হয় এবং তিনটি বিষয় আলাদা হয়ে যায়।


আলোচ্য কাব্য “ধর্ম”তেও কবি পৃথা চ্যাটার্জী, উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতেই, ধর্মকে মানবতা থেকে ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করছেন। কাব্যের শুরুতেই কিছু উদাহরন দিয়েছেন, ধর্মের কারনে হানাহানি, রাজনীতি, একে অপর থেকে ভিন্ন, ধর্মের মধ্যেই নানা বিভাজন, ধর্ম নিয়ে তৈরী নানা অনৈতিক ব্যবসা, ধর্ম নিয়েই এখানে সেখানে, চায়ের দোকানে আড্ডা, তর্ক বিতর্ক ইত্যাদি। উপরের আলোচনার ১নং দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী “কোন মানুষকে ধর্মের মডেল বিবেচনায় নিয়ে ধর্মকে বিচার করা”, সেটাকেই ব্যবহার করা হয়েছে। এবং সেই একই বিবেচনায়, ধর্ম থেকে মানবতাকে আলাদা করে উপসংহার টানা হয়েছে। ধর্ম থেকে মানুষকে আলাদা করা হয়েছে, ধার্মীক এবং মানুষ ভিন্ন সত্ত্বা হিসেবে ভাবা হয়েছে।


কবির প্রতি রইলো অসংখ্য শুভেচ্ছা, এমন একটি ইস্যু নিয়ে কাব্য রচনার জন্য, মূলত অনেকেই ধর্ম সম্পর্কে এরকম ভাসা ভাসা ধারনার কারনে, নানা বিভ্রান্তির মধ্যে থাকেন এবং নিজেকে একটি উপসংহারে টেনে নিয়ে যান।