আলোচনা ৯৩


কোন মানুষের পক্ষেই নিরঙ্কুস ভাল কিংবা খারাপ হওয়া বা থাকা সম্ভব নয় বলেই আমার ধারণা, এটা প্রকৃতির শর্ত বিরোধী, যদিও ভাল, মন্দ, খারাপ ইত্যাদি বিষয়গুলোই আপক্ষিক কিন্ত আপাতভাবে কিছ সূচক প্রায় সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত হিসেবে ধরে আমরা ভাল মন্দ বিচার করতেই পারি। সে বিচারে, প্রত্যেকটা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্টের মধ্যেই দুটো ধারা বজায় থাকে ভিন্ন শতাংশে। বিপত্তি শুরু হয় এখান থেকেই যা কবি আনোয়ার মজিদ এর ‘দ্বিধান্বিত মন’ কবিতার মূল বক্তব্য।


মানুষ সব সময় ভাল কিছু করতে চাইলেও পারে না তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সাপোর্ট করে না আবার অনেক সময় নিজের ভেতর থেকেও সাপোর্ট করে না, মন্দ/খারাপ স্বভাব মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, ফলে মানুষকে সার্বক্ষণিক ভাবেই পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার সাথে সাথে নিজের সাথেই নিজেকে মোকাবেলা করতে হয়, যাকে কবি ‘দ্বিধান্বিত মন’ নামে অভিহিত করেছেন। কবিতার ফোকাস ইস্যু হোল ‘দ্বিধান্বিত মন’, ভিন্ন ভিন্ন উদাহরণ দিয়ে কবি তার বক্তব্য ব্যাখা করেছেন।


মানুষ নিজের ‘লোভকে’ সব সময় বশে রাখতে পারে না ফলে লোভের বশবর্তী হয়েই অনেক সময় নিজের সাথেই নিজে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে, নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মানবিক বোধগুলো তখন আর কাজ করে না, কবি বলেন,  “বোধগুলো সব গুম হয়ে যায়, খুন হয়ে যায় ক্ষোভ, দিনে দিনে বাড়ছে দেনা, বাড়ছে মনের লোভ”। ভেতরে লুকিয়ে থাকা স্বার্থ পূরণের বাসনাই তাকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে রাখে, অন্যায়গুলোকে প্রশ্রয় দিয়ে থাকে। যে কোন মুল্যে নিজের স্বার্থ পূরণে মরিয়া হয়ে উঠে এমনকি ‘চামচামি” করে হলেও সব অর্জন তার চাই-ই চাই।  চামচামি তখন তার  খারাপ কিছু মনে হয় না, চামচামিকে নুতন ব্যাখা দিয়ে ‘এক ধরনের গুন” কিংবা ‘শিল্প’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।  চামচামি শব্দকে একেক জন একেকভাবে ব্যাখা করে, কেউ দেখে খুব ‘নেগেটিভ’ অর্থে আবার কেউ বলে চামচামি দরকার বাস্তবতার স্বার্থে, আবার অন্যরা এক ধাপ উপরে গিয়ে ব্যাখা দেন, ‘লবি বা লবিস্ত ফার্ম’ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে যে কাজ করে সেটাও এক ধরণের চামচামি কিন্তু একই কাজ ব্যক্তি পর্যায়ে করলে তার নেগেটিভ ধারণা তৈরি হয়। চামচামি শব্দ নিয়ে সে এক অন্য বিতর্ক, এখানে নেগেটিভ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।


এরকম এক পরিস্থিতিতে, মানুষ যখন নিজের সাথেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে তখন ভেতরে লুকিয়ে থাকা ‘ভাল মন” মাঝে মাঝেই বিদ্রোহ করে, ভাবে নিজের মন্দ দিকটাকে ‘ক্রসফায়ারে ফেলবো’ অর্থাৎ মেরে ফেলবো, এরকম এক প্রত্যাশা দিয়েই কবি শেষ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ মুহূর্তে আবার হেরে গেছেন নিজের কাছেই, নিজের ভেতরে ঘাপটি দিয়ে থাকা ‘মন্দ মনের’ কাছে, তাই বলেন, “ আবার ভাবি তুইতো আমার স্বর্গ সুখের দরবার’


কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা, দারুণ এক বিষয় নিয়ে কবিতা উপহার দেয়ার জন্য যা পাঠককে ক্রমাগতই ভাবতে সহায়তা করবে।