আলোচনা ৮৭


এই শতাব্দীর প্রথম দশকে, বাংলাদেশের এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে “নারী নির্যাতন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা” আন্দোলন হয়েছিল, বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই আন্দোলনকে, নারী আন্দোলনের মাইলফলক হিসেবে দেখা হয়। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল এক জঘন্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তৎকালীন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের এক উদীয়মান নেতা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ‘১০০তম ধর্ষণ উৎসব’ পালন করেছিল। ভাবা যায় মানুষ কতটা অমানবিক হতে পারে !! মানুষ কতটা নীচে নামতে পারে? মানুষ নামের শ্রেষ্ঠ প্রাণী কতটা জঘন্য হতে পারে!!! ঘটনা দিয়ে শুরু করলাম, কারন কবিতার শুরু হয়েছে ‘ এক থেকে একশ” লাইনটি দিয়ে।


কবি বিভাংশু মাইতি খুব অল্প কথায় “এ কী লজ্জা’ কাব্যে মানুষের অমানবিকতা, হীন প্রকৃতির মানুষিকতা, জঘন্য আচরণের পাশবিকতা এবং কলঙ্কিত মানব সত্ত্বাকে ‘এ কি লজ্জা!!’ কবিতায় প্রকাশ করেছেন। কবি লিখেছেন-
“এক থেকে একশ', কেউই আর বাদ গেল না। এ লজ্জা লুকোবো কোথায়, এ মুখ দেখাবো কোথায়”?
“মানবতা কঁকিয়ে কাঁদছে, চারিদিকে চিৎকার... বুকফাটা হাহাকার। নারী কাঁদছে, শিশু কাঁদছে, অসহায় আর্তনাদে, বিদীর্ণ দিগ্বিদিক”।


কি এক ভয়াবহ অশুভ সময় অতিক্রম করছি আমরা, মানুষের প্রতি অন্যায়, অত্যাচার চলছে, নির্মমতা চলছে,  নারী শিশু কেউ বাদ যাচ্ছে না কিন্তু আমরা কোথাও এর বিচার চাইতে পারছি না, কাউকে বলতে পারছি না, কোথাও ন্যায় বিচার পাচ্ছি না, অথচ আমাদের মানবতার গর্ব, শ্রেষ্ঠত্বের গর্ব, মনুষ্যত্বের গর্ব...... ছিঃ ছিঃ। আমাদের আইন আছে, আদলত আছে, বিচারিক ব্যবস্থা আছে, নিয়ম কানুন সহ শিক্ষা ব্যবস্থা সবই আছে কিন্তু তারপরও আমরা অসহায়, আমরা নিঃস্ব, আমরা হতাশাগ্রস্ত, আমরা বিবেকহীন, আমরা .........


মানুষের তৈরি বিচার ব্যবস্থায় যখন ঘুনে ধরে যায়, মানুষ যখন আস্থা হারিয়ে ফেলে তখন অসহায় মানুষের আর উপায় থাকে না, আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না, একমাত্র ভরসা বিধাতার আদলতে বিচার পাবার অপেক্ষায় থাকা, ইহকালে কিংবা পরকালে। কবি এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই কবিতা শেষ করেছেন-“হে নিষ্ঠুর বিধাতা, এখনো আমি বেঁচে কেন, মানবতার মৃত্যুর আগে, মানুষের মৃত্যু হোক”।


কবির প্রতি অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা রইলো ।