বিশ্লেষণ-৪৪


খুব অল্প কথায় খুব কঠিন একটি  ইস্যু নিয়ে লিখেছেন কবি তমাল ব্যানার্জি “ ইহাই গণতন্ত্র’।  গণতন্ত্র প্রত্যুয়কে আমার কে কিভাবে ভাবি, কে কতটা অন্তরে ধারণ করি কিংবা ভালভাবে বুঝি কিনা তার যেমন একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন তেমনি আরেকটি দিক উন্মোচন করেছেন যে, আমারা অনেকেই অনেক কাজ করি, লিখি, বক্তৃতা দেই কিন্তু না বুঝেই কিংবা বুঝেও হিপক্রেসি করি। পৃথিবী ব্যাপী গণতন্ত্রকে নিয়ে অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত উক্তি আছে, আছে  গণতন্ত্র চর্চার  অনেক সফল উদাহরণ আবার গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক চর্চার ভূরি ভূরি উদাহরণও আছে।  এরকম একটি প্রেক্ষাপটেই কবিতাটি লেখা হয়েছে।


ভদ্রলোক যাচ্ছিলেন  ‘গনতন্ত্র’ বিষয়ক আলোচনা সভায় যোগ দেয়ার জন্য এবং গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তৃতাও দিবেন তিনি তাই যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই যাচ্ছিলেন, বিখ্যাত সব উক্তি লিখে নিয়েছিলেন, গণতন্ত্র বিষয়ক জবরদস্ত এক বক্তৃতা দিবেন। কিন্তু পথিমধ্যে হঠাৎ ফেলা দেয়া উচ্ছিষ্ট খাবার নিতে আসা লোকের ভীর দেখে থমকে দাঁড়ালেন, কাছেই দেখলেন লকলকে জিভ বের করে থাকা কুকুর, অন্যদিকে একজন ফটোগ্রাফারের ছবি তোলার দৃশ্য। মানুষ আর কুকুরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই, শ্রেণী বৈষম্যের এই দেশে একদল খাবার ফেলে দিচ্ছে আরেকদল কুকুরের সাথে দল বেধে সেই ফেলে দেয়া খাবার কুড়িয়ে খাবার খাচ্ছে।


ভদ্রলোকের বিবেক জাগ্রত হোল, গনতন্ত্র সম্পর্কে ভাবনার গতি প্রকৃতি পরিবর্তন হোল, শ্রেণী বৈষম্য আর গণতন্ত্র একসাথে চলে না। যে দেশে মানুষের অবস্থান কুকুরের সমান্তরালে নেমে এসেছে সেখানে গণতন্ত্র থাকতে পারে না। তিনি যে সভায় গণতন্ত্রের উপর বক্তৃতা দিতে যাচ্ছিলেন, হয়তো ভাল প্রস্তুতি থাকার কারনে ভাল বক্তৃতাও দিতেন কিন্তু যে দৃশ্য তিনি দেখলেন তা কোনভাবেই গণতন্ত্রকে সাপোর্ট করে না তাই বিবেকের তাড়নায় তার বক্তৃতার স্ক্রিপ্ট ছিঁড়ে ফেললেন ।


কবি চমৎকারভাবে গণতন্ত্রকে চিত্রায়ন করলেন মাত্র অল্প কয়েকটি লাইনের এবং একটি মাত্র চরিত্রের মাধ্যেমে।  কবির জন্য অশেষ শুভেচ্ছা রইলো ।