আলোচনা  ১৫০


“একা থাকতে পারা, একা থাকা শিখে নেয়া”, একটি দর্শন, আক্ষরিক অর্থে একা থাকা মানে, সন্ন্যাস যাপন, কোন প্রকার সামাজিকতা থেকে দূরে থাকা, সকলের সাথে একত্র জীবন পরিহার করা, সম্পূর্ন একা থাকা ইত্যাদি। কিন্তু দর্শন বলে, একা থাকা মানে, সকলের মাঝে থেকেও একা থাকা শেখা, অন্যের উপর নির্ভরশীলতা কমানো, নিজের ভাল/মন্দ নিজেই বিচার বিশ্লেষন করে ভালো থাকার চেষ্টা করা ।


ভাতরের বিখ্যাত গুরু, সাদ গুরু বলেন, নিজের ভালো থাকা অন্যের উপর নির্ভর করে হয় না। যখন কেউ নিজের ভালো থাকা, অন্যের সাথে সম্পর্কিত করে ফেললে, তখন তার ভালো থাকা আর তার নিজের উপর নির্ভর করে না, সেটা অন্যের ইচ্ছে অনিচ্ছের উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়, ফলে নিজের ভালো থাকা অন্যের নিয়ন্ত্রানাধীন হয়ে পরে। নিজের ভালো থাকা যখন নিজের নিয়ন্ত্রের বাইরে চলে যায় তখন, সে কখন ভালো থাকবে কিংবা কখন খারাপ থাকবে সেটা আর সে নিজে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না, নিয়ন্ত্রন করে অন্য কেউ। তাই সাদ গুরুর প্রধান দর্শন হলো, একা থাকতে শেখা, অর্থাৎ নিজের ভেতর একটা জগত তৈরী করা যেটা তাকে ভালো থাকতে শেখাবে। আক্ষরিক অর্থে ‘একা থাকা” বা সন্ন্যাস যাপন সাদ গুরুর দর্শন না।


যে কোন ধর্মীয় দর্শন (প্রধান প্রধান ধর্ম), একা থাকা বা সন্ন্যাস যাপনকে জোড়ালোভাবে সমর্থন করে না, বরং সামাজিকভাবে, পারিবারিভাবে জীবন যাপনকেই উৎসাহিত করে। একত্রে থাকার নানা ধরনের ঝামেলা, ফ্যাসাদ থাকে, ধর্মীয় দর্শন সেগুলোর সাথে সমঝোতা করেই জীবনের নির্দেশনা দেয়।


অন্যদিকে, মোটিভেশনাল স্পিকার গন, একা থাকতে শেখা বা একা থাকতে পারাকে আক্ষরিক অর্থে একা থাকাকে বোঝান না বরং নিজের ভালো থাকার জন্য নিজের ভেতর একটা অভ্যাস তৈরী করা (যেমন বই পড়া, গান শোনা, ধ্যান করা, পার্থনা করা) যেন নিজের ভালো থাকা বাইরের কোন কিছু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়। নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করাই মোটিভেশনাল স্পীকারদের মূল লক্ষ্যবিন্দু।


আলোচ্য কবিতা, আবৃত্তি শিল্পী শান্ত ইসলাম এর “এখন তুমি একা থাকা শিখে গেছো”, ভিন্ন রকমের ‘একা থাকা’ নিয়ে কাব্য লিখেছেন। এখানে, আমাকে ছাড়া ‘তুমি’কেই একা বলেছেন, তুমি অন্য কারোর সাথা থাকাকেও একা বলেছেন। মুলত এটা এক ধরনের ক্ষোভ প্রকাশের ভাষা, আমি ছাড়া তুমি মানেই “তুমি একা”। আবার অন্যদিকে, বন্দী জীবনকেও ‘স্বাধীন’ বলেছেন, ফলে সেটাও আক্ষরিক অর্থে ‘স্বাধীন’ শব্দের সাথে যায় না। বন্দীদশা এবং স্বাধীনতা দুটো একসাথে থাকতে পারে না।


এখানে কবি, নিজের ভালোবাসার মানুষকে, প্রিয় মানুষকে হারিয়ে, অনেকটা প্রলাপ বকার মতোই নানা শব্দ ব্যবহার করেছেন তার কবিতায়, শব্দগুলোর কোন সঠিক অর্থ খুঁজে পাওয়া যাবে না, আক্ষরিক কোন মিনিং খুঁজে পাওয়া যাবে না কিন্তু পুরো কবিতা মূলত প্রিয় মানুষকে হারিয়ে মনের একটা অবস্থাকে প্রকাশ করার, সেই মুহূর্তের সেই অনুভূতিকে প্রকাশ করার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে মনে পরা শব্দ দিয়েই প্রকাশ করতে চেয়েছেন। ফলে, কবিতাটিকে বা কবিতার শব্দকে আক্ষরিকভাবে বুঝতে চেষ্টা না করে বরং অনুভূতিকে, অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে হিসেবে শব্দ চয়নকে বিচার করলে কবি এবং কবিতার প্রতি সুবিচার করা হবে।


কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।