আলোচনা  ১৫৪


কবি মানব রহমান আসরে নবাগত, এ পর্যন্ত ২৭টি কবিতা প্রকাশ করেছেন, তার দুয়েকটা কবিতা পড়ার পর, একটু ভিন্ন ধারার কবি মনে হলো, ফলে তার সবগুলো কবিতাই বেশ সময় নিয়ে পড়ে ফেললাম, তার মধ্য থেকে একটি কবিতা আলোচনায় নিয়ে আসলাম।


আলোচ্য কবিতার শিরোনামটিই ভিন্নধারার, কবিতার যে বক্তব্য, তাতে সাধারনত কবিতার শিরোনাম হতো, অপূর্ন স্বপ্ন, স্বপ্নের প্রান্তসীমা কিংবা অসমাপ্ত অভিলাষ কিন্তু উনি লিখলেন “কমজোরের ওভিলাষ”।  কমজোর শব্দটি সচরাচর লিখিত ভাষায় দেখাঁ যায় না, এটা অনেকটাই কথ্য ভাষার শব্দ কিন্তু “অভিলাষ” নিখাদ লিখিত রচনা বা কাব্যে ব্যবহৃত হয়। ফলে, প্রথমেই মনে হলো, এরকম কথ্য এবং লিখিত শব্দের মিশেলে কবিতার শিরোনাম !! কবিতাটি পড়ার আকর্ষন তৈরী হলো।


“মানুষ তার স্বপ্নের চেয়ে বড়”,আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদ স্যারের উক্তি বেশ জনপ্রিয়, এছাড়াও বিখ্যাত এবং সফল মানুষদের বায়োগ্রাফিতে এরকম অসাধারন সব মটিভেশনাল উক্তি পাওয়া যায়। বিখ্যাত মানুষদের উক্তি/ বানী নিয়ে বইও প্রকাশ হয়, মোটিভেশন স্পীকারগন এখানে সেখানে সে সব উক্তি নিয়ে স্পীচ দিয়ে থাকেন, ভিডিও ক্লিপ তৈরী হয়, সেগুলো আবার ভাইরালও হয়।


আলোচ্য কবিতার শিরোনাম অনুযায়ী, ‘অভিলাষ’ মানে ইচ্ছে, এবং কমজোর মানে ইচ্ছেশক্তির মধ্যে জোর কম অর্থাৎ ইচ্ছে আছে কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য ইচ্ছে শক্তির মধ্যে যথেষ্ট মাত্রার ঘাটতি রয়েছে। প্রচলিত আছে, সিংহ দিনে ১৮ ঘন্টা ঘুমায় আর গাধা দিনে ১৮ ঘন্টা পরিশ্রম করে কিন্তু তারপরও সিংহ বনে রাজা।  আবার ভারতের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং পরমানু বিজ্ঞানী আবুল কালাম বলেছেন, “ ঘুমিয়ে থেকে যা দেখা হয় সেটা স্বপ্ন নয় বরং সেটাই স্বপ্ন যা ঘুমোতে দেয় না”।


কিন্তু এখানে কবি তো বলেছেন, শত শত রাত জেগেছেন, শীতের তীব্রতাকে আলিঙ্গন করেছেন, শুধু মাত্র পরিবর্তনের আশায়। তাহলে মনীষীদের বক্তব্যের সাথে কবি’র জীবন অভিজ্ঞতা ভিন্ন, নাকি সিংহ এবং গাধা নিয়ে যে প্রচলিত মীথ, সেটাই ঠিক!! শুধু পরিশ্রম করাই যথেষ্ট নয়, স্বপ্ন পুরনের জন্য চাই কৌশল এবং পরিশ্রমের সম্মিলিত যোগ কিন্তু আমরা আবার এটাও ছোটবেলা থেকেই শিখে এসেছি যে “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি”, ফলে এখানে নানা ধরনের মতবাদ দেখা যাচ্ছে। একটা অপরটির বিপরীতমুখী অবস্থানও দেখা যাচ্ছে।


কবি আবার বেশ কাব্য করে বলেছেনে, “আমি অবহেলাকে শুকিয়েছি নিজ শরীরের আঝরে ঝড়ে যাওয়া ঘামে, রক্তচক্ষুতে আপোষ মেনেছি, পরিবর্তন আসবে বলে”, কোন প্রকার অবহেলা তো ছিল না পরিবর্তনের জন্য, সব রকমের চেষ্টাই তো করা হয়েছে। কবি, “শোককে পাথর করেছেন, আনন্দকে  করেছেন ম্লান” তবুও কি  পরিবর্তন এসেছে, যে পরিবর্তনের জন্য এতো আয়োজন?


কবি কোন উপসংহার দেননি, এতো আয়োজনের পর পরিবর্তন এসেছিলো কিংবা আসেনি, কবিতা পাঠে কোন উত্তর পাওয়া যায় না কিন্তু শিরোনামে একটা ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন কবি, সেটা হলো “কমজোর”, সেখান থেকে ধরে নিতে পারি, কমজোর থাকলে পরিবর্তন নাও আসতে পারে, অর্থাৎ ইচ্ছেশক্তিতে যথেষ্ঠ মাত্রায় “জোর” থাকা চাই। পরিবর্তনের জন্য পরিশ্রমের সাথে আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা চাই, ভিন্ন ধারার কৌশল থাকা চাই সর্বোপরী লেগে থাকা চাই। যদিও আমরা কবিতা থেকে কোন উপসংহার টানতে পারি না।


কবিতাটি খুব ভালো লেগেছে, কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।