আলোচনা  ১৩৬


মধ্য বয়স পেরিয়ে গেলে সাধারনত মানুষ অনেক বেশী নস্টালজিয়ায় ভোগে, পেছনের কথা মনে করে কখনো বিষাদে ভরিয়ে দেয় মন আবার কখনো আনন্দের কোন স্মৃতি পুনরায় উপভোগ করে। নষ্টালজিয়ায় ভোগে না, এমন মানুষ প্রায় নাই বললেই চলে, কেউবা অনেক বেশী মাত্রায় ভোগে আবার কেউ মাঝে মাঝে কিন্তু মধ্য বয়সী মানুষের এটা একটা সাধারন বৈশিষ্ট্য, কেননা, সাধারন নিয়মে জীবনের কিছুটা সময় ফেলে আসে, আবার সামনে থাকে কিছুটা অংশ। ফলে এক ধরনের পাওয়া- না পাওয়া, চাওয়া- না চাওয়া ইত্যাদির হিসেব মেলাতে থাকে মনের অজান্তেই। জীবনের একাউন্টস সাধারনত মানুষ মধ্য বয়সেই মেলাতে শুরু করে এবং এ কারনেই নষ্টালজিয়া মনে হানা দেয়।


নষ্টালজিয়া সাধারনত দু রকম হয়ে থাকে, কেউ কেউ জাগতিক বিষয়কে কেন্দ্র করে নষ্টালজিয়ায় ভোগে আবার কেউ কেউ, পরপারের জীবনকে কল্পনা করে নষ্টালজিয়ায় ভোগে। জীবনের মধ্যভাগে এসে হিসেব করতে বসে, পরপারের জীবন কেমন হবে, কেউ যদি ধার্মিক হয়, গত জীবনে কি অর্জন হলো অর্থাৎ পরপারের পুঁজি কি থাকলো ইত্যাদি নানা ভাবনায় পেছনের সময়ের দিকে তাকিয়ে হিসেব কষে।


যায় যায় দিন কবিতায় কবি হাজেরা কোরেশী অপি, জাগতিক চাওয়া-পাওয়াকে অতিক্রম করে গেছেন। ফলে তিনি দ্বিতীয় ধরনের নষ্টালজিয়ায় ভুগছেন অর্থাৎ কবিতার থীম, পরপারের কল্পনা এবং চিন্তাকে কেন্দ্র করে পেছনে তাকানো।


শুরুটা বেশ চমৎকার করেই বলেছেন-


“ভাবি বসে ফেলে আসা দিন
বয়সের ভারে বাড়ে সময়ের ঋণ”


পরপারের চিন্তায় প্রধান যে বিষয়টি প্রাধান্য পায়, পেছনের সময়ের সদ্ব্যবহার হয়েছে কিনা?  সময়ের কাছেও আমাদের এক ধরনের ঋণ থাকে। মানুষ সাধারনত, অর্থ, জমি, বাড়ি ইত্যাদিকেই সম্পদ ভাবে কিন্তু সুস্থতাও সম্পদ, তেমনি সময়ও একটি বড় সম্পদ, যদিও অনেকেই  সময়কে সম্পদ হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে ভাবে না (আমাদের দেশে তো দিনে ৪-৬ ঘন্টা ট্রাফিক জ্যামেই নষ্ট হয়, নীতিনির্ধারকগন সময়কে সম্পদ হিসেবে গন্য করেন না, ফলে তাদের কোন মাথা ব্যথাও থাকে না)


কবিতার প্রয়োজনে বেশ কিছু রূপক ব্যবহারের পর, কবি আবার লিখলেন-


“কেমনে দিব যে পাড়ি আখেরের ঘাট
কোন তীরে হবে ইতি জীবনের পাঠ”


জাগতিক জীবন শেষে, আখেরের জীবন পাড়ি দিয়ে হবে, তার জন্য জাগতিক জীবন থেকেই পুঁজি নিয়ে যেতে হবে। সে ভাবনাই কবিকে পেয়ে বসেছিল, পরপারের জীবন কোন তীরে ভিড়বে? সেটা কেমন হবে? সুখের হবে কি না ইত্যাদি ভাবনায় মোহচ্ছন্ন মন।


কবিতাটি যদি ধর্মীয় ভাবধারার নষ্টালজিয়া, কিন্তু আমার কাছে ভালোই লেগেছে
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।