আলোচনা ৩২


বেশ কিছুদিন আগে কবি সোমাদ্রি, খুব ছোট কিন্তু গভীর একটি কবিতা “জীবন মানে” উপহার দিয়েছিলেন আমাদের, তখন একবার পড়েছিলাম কিন্তু সময় করে আর আলোচনা করা হয়নি। আজ আবার কবিতাটি চোখে পড়লো আবারো মনোযোগ আকর্ষিত হল। কবি সোমাদ্রি ‘জীবনের মানে’ কি তাই নিয়ে লিখেছেন। যুগ যুগে কবি সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, সমাজ বিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী এমনকি দার্শনিকগনও জীবনের মানে খুঁজেছেন। আমাদের মত সাধারণ মানুষদের মধ্যে অনেকের মনেই এ প্রশ্ন সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায় কিন্তু সার্বজনীন কোন অর্থ কেউ খুঁজে পেয়েছেন কিনা আমার জানা নেই। সৃষ্টিকর্তার অপার রহস্য লুকিয়ে আছে জীবনের রন্ধে রন্ধে, মানুষের সাধ্য কি তা খুঁজে বের করা কিন্তু তারপরও মানুষের চেষ্টার সীমা নেই। নিরন্তর চেষ্টা চলছে, জীবনের মানে খুঁজে বের করার। প্রত্যেকেই যার যার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে জীবনকে দেখার চেষ্টা করেন, কবি সোমাদ্রিও তাই করেছেন।  


কবিতার শুরুটা বেশ কাব্যিকভাবে হয়েছে, “রাতের লেখারা দিনের আলোয়, কবিতা থেকে গল্প হয়ে যায়”।ছোট গল্পকে ব্যাখা করা হয় “ বলা হলেও হোল না শেষ’, আর গল্প বা উপন্যাসকে বলা হয়, ‘ যা বলা হয়ে গেছে, যা বলার বাকী নেই আর”, আবার কবিতা মানে “ যা আজও বলা হয়নি,কিংবা বলতে চেয়েও স্পষ্ট করে বলা যায়নি। আমি বলি, কবিতা হল, ‘বলেছি সবই, বাকি রাখিনি কিছু, আড়াল রেখেছি যতটুকু তা কেবল তোমায় ছোটাবে ভাবনার পিছু’। রাতের আধারে যা কিছু দেখা যায় না আবছা আলোয়, দিনের আলোয় তা ঝকঝকে পরিস্কার, গল্প কিংবা উপন্যাসের মত। রাতের লিখা কবিতা যা দিনের আলোয় গল্প হয়ে যায়। কি চমৎকার এক উপমা দিয়ে ব্যাখা করেছেন জীবনের অপার রহস্যকে।


বেশ কিছু উপমা ব্যবহার করেছেন কবি, “ঐ শুয়ো যেমন আজ প্রজাপতি, তোমরা ফুল দেখলে, প্রজাপতিকে সুইট বললে, বেশ করলে, এখন মরসুমটাই এমন, তবে ভেবে দেখলে না, সৌন্দর্যের প্রজাপতি আয়ু খুবই স্বল্পস্থায়ী, আসল জীবন কিন্তু শুয়োপোকার কষ্টের মধ্যেই”। কি অসাধারণ এক বক্তব্য, আমারা কেবল বাইরের সৌন্দর্য দেখি, আপ্লুত হই, বাহবা দেই যদিও তা স্বল্প স্থায়। ক্ষণস্থায়ী বিষয় কিন্তু চাকচিক্যে ভরা এমন বিষয়ই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। জীবনের মানে খুঁজতে গিয়েও কবি দেখেছেন, বাহ্যিক জীবনের চাকচিক্যের পেছনে থাকে এক গভীর কষ্ট, কষ্টের অনলে পুড়তে পুড়তে জীবন খাটি হয়ে উঠে, পরে আমারা খাটি অংশটিকেই বাহবা দিই কিন্তু পেছনের পরে থাকা কষ্টের কথা ভুলেই যাই।


জীবন দর্শনের এক গভীর উপলব্ধি থেকেই কবিতাটি লেখা। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে। জীবন বোধের গভীরতা নিয়ে কোন কবিতা, গল্প কিংবা উপন্যাস আমাকে খুব টানে। কবির জন্য রইলো একরাশ শুভেচ্ছা।