আলোচনা ৫৬
জি,এম, হারুন-অর-রশিদ কে তার কাব্য ‘কবির মৃত্যু দণ্ড” এর জন্য প্রথমেই শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের আলোচনা, মনে হচ্ছে, আমার কথাই কবি তার কাব্যে ধারণ করেছেন। আমি এ কথাগুলোই বলতে চেয়েছিলাম, বলতে চাই কিন্তু কবির মত গুছিয়ে বলতে পারিনি তাই আমার কথা কাব্য হয়ে উঠেনি । আমার মত এমন হাজারো মানুষের কথা যখন কোন কবিতার বিষয় বস্তু হয় তখন তা আর কেবল সাহিত্য গুণে গুণান্বিত থাকে না, তা হয়ে উঠে গনমানুষের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর ।


একজন কবি নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী থাকায়, বস্তুগত চাওয়া পাওয়ার ব্যাপারে উদাসীন থাকায়, অন্যায় অত্যাচারে বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয়ায়,  গনমানুষের পক্ষের শক্তি হওয়ায় একটু বেপরোয়া গোছের আচরণ করে, মাথা উঁচু করে তার চলন বলন, কোন অন্যায় শক্তির বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান, তাই সকলেই কবি’কে ভয় পায়। একজন কবি অর্থনৈতিক ভাবে কপর্দক শুন্য থাকার পরও শুধুমাত্র আত্মিক শক্তির কারণে অনেকের কাছেই ভয়ংকর এমনকি রাষ্ট্র যন্ত্রের কাছেও। তাই কবি কাল্পনিক এক চিত্রের মাধ্যমে একজিন কবির মানুষিক দৃঢ়তা এবং আপোষহীন চরিত্রকে উপস্থাপন করেছেন।


কবির কলমের খোঁচায় খোঁচায় রাষ্ট্র যন্ত্র দিশেহারা, তাই কবির বিরুদ্ধে মামলা হলে মহামান্য আদালত কবির মৃত্যু দণ্ড ঘোষণা করলে, কবি অট্টহাসি হেসেছে নীরবে, ভয়হীন চিত্তে কবি তা মেনে নেয়, স্লোগানে স্লোগানে জনগণের দাবি নিয়েই কথা বলে, কবির ভাষায়-
“মহামান্য আদালত কবিকে যখন,দোষী ঘোষনা করলো,কবি তখন বুকের মাঝে অট্টহাসি হেসেছে নীরবে......সবাই নাকি আরাম প্রিয় হয়ে গেছে,শুধু কবির কবিতাগুলো চরম বিপ্লবী হয়ে গেছে,একটুও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না রাষ্ট্রযন্ত্রকে, শ্রেনীশত্রু খতম করছে কবিতার অভিমানে,তাই কবিকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলো”


কবিকে রাষ্ট্র যন্ত্র এতটাই ভয় পেল যে , কবির মৃত্যু দণ্ড দেয়ার পরও ভয় কমে না, কবির কলম, খাতা সব কেড়ে নেয়া হয় যেন কবি কবিতা লিখতে না পারে, জনগণকে উদ্দীপ্ত করতে না পারে, তাঁতেও ক্ষান্ত হয় না, তাতে ও কবির মহাশক্তির প্রতি ভয় কমে না, কবিকে উলঙ্গ করেখোঁজা হয়, তখনও কোন কিছুর অবিশিষ্ট আছে কিনা যা দিয়ে কবি তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে।


“তারপরও মহামান্য আদালত কবিকে উলংগ করে দেখতে বললো, কবিতা লেখার মতো আর কিছু লুকিয়ে রাখেনিতো শরীরের গোপন জায়গায়, সাথে সাথে মহামান্য আদালতের আদেশ পালনের জন্য একজন সিপাহী  তার হাতের বড় বড় নোঁখ দিয়ে কবির শরীরের প্রতিটি লোমকুপ আচঁড় দিয়ে দেখলো, বড় বড় দাঁত দিয়ে কামড় দিয়ে দেখলো......”


কি অসাধারণ এক বক্তব্য কবি তার কবিতায় চিত্রায়ন করেছেন, কবির কলমের শক্তিকে, কবির মনের বলীয়ানকে কবি তার শব্দমালায় অসাধারণ এক শক্তির প্রতীক উপস্থাপন করেছেন-
মহামান্য আদালত তার রায়ে আরো বললো,“কবির মৃত্যুর পর তার কোনো কবর হবেনা এই রাষ্ট্রে”। কবি এবার অট্টহাসি দিয়ে চিৎকার করে বলে, “কবিদের মৃত্যু হয়না, কবরের জন্য মাটি দরকার হয়না, কবির কবর হবে প্রতিটি কবির বুকের জমিনে”
কবিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।