আলোচনা  ১৭৩


“লাগাতার প্রশ্ন”, বিরাহমীন ভাবে প্রশ্ন করেই যাওয়া, কেউ কেউ এ আচরনকে ভালো ভাবে নেয় না আবার কেউ কেউ প্রশ্ন করার এ অভ্যাসকে দারুন উৎসাহের সাথে গ্রহন করে থাকেন এবং প্রশ্ন কর্তাকে আরো উৎসাহিত কর থাকেন। মূলত, মানব সভ্যতার অগ্রগতি, “প্রশ্ন করার ইচ্ছে শক্তি থেকেই শুরু হয়েছিলো”। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা নানা মুখী প্রশ্ন-উত্তর-প্রশ্ন, এই চক্রাকারেই সাধিত হয়। পাখি কেন আকাশে উড়তে পারে, মানুষ কেন পারে না, এই ‘কেন’ এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই প্লেন আবিস্কার, আপেল কেন উপরে না গিয়ে নীচে পড়ে, বিজ্ঞানী নিউটনের মনে এ প্রশ্নের জন্ম না হলে, মানব সভ্যতা এতোটা এগোতে পারতো না। কিংবা পানির চৌবাচ্চায় গোসল করতে গিয়ে ‘ইউরেকা’, ইউরেকা…এসব প্রশ্নের মাধ্যমেই বিজ্ঞান এগিয়েছে, আমরা ভোগ করছি বিজ্ঞানের নানা সুবিধে। কিন্তু এ যুগেও কেউ কেউ প্রশ্ন করাকে উৎসাহিত করে না, বরং প্রশ্ন কর্তাকে নানাভাবে হেনস্থা করে থাকে।


একাডেমিক ক্ষেত্রে কিছু কিছু ডিসিপ্লিন প্রশ্ন করার উপরই চলে পুরো পড়াশুনা পর্ব, চলে দিনে পর দিন নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা, প্রশ্ন এবং উত্তর। আবার কিছু কিছু ডিসিপ্লিন প্রশ্ন করাকে পছন্দ করে না, মনে হয় যেন সে সকল সাব্জেক্ট এর জন্মই হয়েছে মুখস্ত বিদ্যার জন্য। যে যতো বেশী মুখস্ত বিদ্যায় পারদর্শী হবে তারই জয়জয়কার। আমি নিজে যখন নৃবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করেছি, তখন দেখেছি, যতো বেশী প্রশ্ন ততোই নুতন নুতন জানার দ্বার উন্মোচন হয়ে যেতো। শিক্ষকরাও প্রশ্ন করাকে সমান তালে উৎসাহিত করতেন।


কবি অজিত কুমার কর তার কাব্য “লাগাতার প্রশ্ন” তে মুলত সে বিষয়টি ই তুলে ধরেছেন বেশ ছন্দে ছন্দে। তবে এখানে বয়স ভিত্তিকে একটা নির্দষ্ট শ্রেনীর মানুষের কথা বলা হয়েছে। শিশুদের প্রশ্ন করাকে উল্লেখ করা হয়েছে। শিশুদের মনে সব সময় নানামুখী প্রশ্নের উদ্রেক হয় মূলত নুতন নুতন বিষয় জানার আগ্রহ থেকে, প্রকৃতিতে এতো কিছু আছে, সবই তাদের মনোযোগ আকর্ষন করে, সবই তাদের কাছে নুতন লাগে ফলে প্রশ্ন করে করে,জানতে চায়, এটা সব শিশুদের জন্যই প্রযোজ্য, এটা একটা প্রাকৃতিক পদ্ধতি। এভাবেই মানব শিশু ধীরে ধীরে পরিপক্ক হয়ে ওঠে, এমন কি যে সব শিশু একাডেমিক শিক্ষা গ্রহন থেকে বঞ্চিত হয়, তাদের শিক্ষা গ্রহন পদ্ধতিও মূলত এটাই। তারা বাবা মা, ভাই বোন, আশে পাশের সবাইকে প্রশ্ন করে করেই শিখে।


সে কারনে কবি বলেছেন- সারাটা দিন হাজার প্রশ্ন, ওই যে ওটা কি মা, কেন অমন ডাকে? ওটা কি গাছ বলো না মা, বস্ত বড় পাতা আকাশে কি লেগেই আছে , মাথায় কেন ছাতা? এসব প্রশ্ন খুবই স্বাভাবিক, শিশুদের কৌতূহলী মনের প্রশ্ন, শিশুরা এভাবেই প্রশ্ন করতে করতে শেখে। কিছু বাবা মা বা অন্যান্যজন খুবই বিরক্তবোধ করেন, ওহ!!! এতো কেন প্রশ্ন করে? কেউ আবার খুব যত্ন নিয়ে শিশুদের এসব সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন।


শিশুদের এটাই স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে দেখা যায়, একের পর এক প্রশ্ন, যেটাকেই কবি বলেছেন ‘লাগাতার”, অর্থাৎ একটা প্রশ্নে উত্তর না পেতে পেতেই আরো অনেক প্রশ্ন মনে জমা হয়ে থাকে। তাদের কৌতূহলী মন সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়, পৃথিবীতে তারা অবাক চোকে দেখে।


আমার কাছে কবিতাটি ভালো লাগার একটা বড় কারন হলো, শিশুদের শিক্ষার যে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পদ্ধতি সেটাকে ফোকাস করে রচনা করেছেন কাব্য। আমরা অনেকেই শিশুদের লাগাতার এই প্রশ্ন করার অভ্যাসকে পছন্দ করি বা না করি, এটাই প্রাকৃতিক পদ্ধতি, এটাকেই মেনে নিতে হবে, যারা এটা পছন্দ করি না তাদেরকেই তাদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে, শিশুদের এই প্রশ্ন করার অভ্যাসকে পছন্দ করতে হবে।


করিব জন্য রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা।