আলোচনা ২৫


মনের মধ্যে একটি মৌলিক প্রশ্ন সামনে রেখে এবং কিছুটা আক্ষেপ, আকুতি রেখেই কবি অনিক মজুমদার তার কাব্য ‘নিজের মত করে’ রচনা করেছেন। একটি বাচ্চা জন্ম হবার পর ব্যাকরণ শিখে তারপর কথা বলা শিখে না বরং কথা বলতে বলতেই কথা বলার আর্ট এবং ব্যাকরণ শিখে। অনেকে যদিও দ্বিমত পোষণ করবেন- কথ্য ভাষা এবং লেখা ভাষার মধ্যে ভিন্নতা আছে, লিখার জন্য অবশ্যই ভাষার ব্যাকরণ মেনেই লিখতে হবে।


শিল্পের যে কোন বিভাগের (যেমন- কবিতা, আর্ট, ছোট গল্প, ফটোগ্রাফি) মুল কথাই হল, মনের ভাব প্রকাশ করা, মনের অনুভূতি গুলো অন্যের সাথে শেয়ার করে অনুভুতির বিচ্ছুরন ঘটানো । সেক্ষেত্রে যে কোন শিল্পের একটা নিজস্ব ভাষা আছে,ব্যাকরণ আছে এবং তা মেনেই শিল্পের চর্চা করা দরকার। কট্টর পন্থীরা মনে করেন,আগে ব্যাকরণ পরে শিল্প চর্চা আর উদারপন্থীরা মনে করেন, মনের অনুভুতি প্রকাশ করার ইচ্ছেটাই প্রধান, সে ইচ্ছেকে বাধা দেয়া কোনভাবেই উচিৎ না, লিখতে লিখতেই ব্যাকরণ শেখা হবে। কবিতা লেখার ক্ষেত্রেও তাই।  কবিতার ব্যাকরণ নামক জুজুর ভয় দেখিয়ে কবি সত্ত্বাকে আটকে রাখা ঠিক নয়।


কবি অনিক মজুমদার তার কাব্যে একজন নুতন কবির মনের অনুভূতিকে অর্থাৎ কবিতা হচ্ছে কি না, কবিতার ব্যাকরণ মেনে লিখা হচ্ছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে মনের ভেতর তোলপাড় করা দ্বন্দ্ব নিয়েই লিখেছেন “লিখি আমি আবোল তাবোল- লিখি গদ্য কবিতা, ছন্দ মোরে দেয়না ধরা- তাই, পদ্য হয়না” কিন্তু কবি লিখতে চান , প্রতিনিয়তই নিজের অনুভুতিকে প্রকাশ করতে চান, নিজেকে নিজে সারাক্ষন বলতে থাকেন লিখে চল আবার অন্যরা বলে এগুলো কবিতা হচ্ছ না, এরকম একটি অবস্থায় নুতন কবির মনের অবস্থা অঙ্কন করেছেন-“লিখি আমি নিত্য নতুন- লিখি বাস্তবতার নিরিখে, লোকে বলে পাগল আমায়- বিবেক বলে লিখতে। মগজ কথন ধীরে ধীরে- হৃদয়কে দেয় নাড়া,হস্ত বলে লেখনা ব্যাটা- ধরনা কলম খাতা”


নুতন কবি, মনের কথা অবিরত লিখে চলেন, বাস্তবতার নিরিখে লিখেন, মনের তাগিদে লিখেন, লিখতে ভাল লাগে তাই লিখেন কিন্তু সবাই তাকে পাগল বলেন, কবিতার নামে আবোল তাবোল লেখা বলে তিরস্কার করেন। কবি সব কথা গুছিয়ে লিখতে পারেন না, কবিতার ব্যাকরণ এর আবরণ দিতে পারেন না, কিন্তু সকাল সন্ধ্যা লিখে চলেন। লিখাগুলো জাতের হয় কিনা অর্থাৎ কবিতার মান বিচারে পাঠক গ্রহন করবে কিনা, বোদ্ধা কবিগন কবিতা হিসেবে অনুমোদন দিবেন কিনা ইত্যাদি বিষয়গুলো কবিকে ভাবিয়ে তোলে।


নুতন কোন এক কবির, নুতন কবিতা লিখিয়ে হিসেবে মনের অবস্থা, চারপাশের নানা ধরনের তির্যক মন্তব্য ইত্যাদি নিয়েই পুরো কাব্য, যা আমাকে আলোচনায় টেনে এনেছে। একই ভাবে আমি নিজেও ভাবতে শুরু করেছি, কবিতার উপর আলোচনা করছি নিজের মত করে কিন্তু কবিতা আলোচনার ব্যাকরণ মেনে করতে পারছি কিনা সে আশংকা থেকেই যাচ্ছে । কবির জন্য অনেক শুভেছা রইলো ।