আলোচনা  ১৯১


ধর্মীয় দর্শনের মূল স্পিরিটকে সামনে রেখে পুরো কাব্য রচনা। সাধারনত ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে যে কবিতাগুলো লিখা হয়, প্রায় সবগুলোই একপাক্ষিক থাকে, হয় ধর্মীয় অনুশীলনকে জোড় দিয়ে থাকে নয়তো ধর্মের জ্ঞানতাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে লেখা হয়। এখানে দুটো দিকের একটা সমন্বয় দেখা গেছে, একটি গল্পের আকারে ধর্মের পুরো স্পিরিটকে তুলে আনা হয়েছে।  আমি জন্মগতভাবে এবং বিশ্বাসগতভাবে যেহেতু একটি ধর্ম চর্চা করি, যে কারনে কবিতাটি আমার খুব ভালো লেগেছে।


মূলত ধর্মের (যে কোন ধর্ম, যদিও ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে আমার খুব বেশী পড়াশুনা নাই) দুটো দিক থাকে, একটা-রিচুয়াল বা অনুশীলন জনিত অন্যটি, আত্মিক এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক। দুটোরই প্রয়োজনীয়তা একই সাথে হওয়া দরকার অন্যথায়, ঘাটতি থেকেই যায়। জ্ঞানতাত্তিক চর্চা ছাড়া শুধু অনুশীলনে, অন্ধত্ব থাকে এবং ভুল প্র্যাক্টিস এর সম্ভাবনা  থেকেই যায়। অন্যদিকে ধর্মের শুধু জ্ঞানতাত্ত্বিক চর্চা থাকার পরও অনুশীলনের অভাবে তার প্রায়োগিক ফলাফল দেখাঁ যায় না এবং বাস্তব জীবনে কোন কাজেই লাগে না। কেনন, ধর্ম গ্রন্থ একটি পরিপূর্ন জীবন বিধান, একটি গাইড লাইন, যেখানে জ্ঞান এবং প্র্যাক্টিস এর সমন্বয় খুব জরুরী।


আলোচ্য কবিতা “পিপড়ের অভিযোগ”, কবি সুলতান মাহমুদ, পিপড়ের একটি কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে, ইহকালের কর্মফল কিভাবে পরকালের বিচার ব্যবস্থা এবং ন্যয্যতার সাথে সম্পর্কিত সেটা দেখিয়েছে (এরকম অনেক গল্প/ইতিহাস অবশ্য কোরআল শরীফে অনেক উল্লেখ আছে)।


যে কথা আগেই বলেছি, জ্ঞানভিত্তিক চর্চা না থাকলে, অনুশীলনে অনেক ঘাটতে থেকে যাবার সম্ভাবনা থাকে যায় এবং এর প্রতিফল হিসেবে পরকালের বিচারের রায় নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকবে। একটি পবিত্র আত্মা সারাজীবন খব ভালো ভালো কাজ করেছে যেমনটা ধর্মীয় বিধানে বলা হয়েছে (এখানে কবি একটা ভালো কাজের লিষ্ট দিয়েছেন, যেমন- পা ফেলেছে খুব সাবধানে যেন অন্যের ক্ষতি না হয়, পুণ্যের কাজ করেছে নিয়মিত ইত্যাদি)


কিন্তু পরকালে যখন বিচারের মুখোমুখি হলো, তার নিজের বিচারে ভুল কিছু হয়নি, ভালো ভালো কাজের বিনিময়ে সে তো সৃষ্টিকর্তার কাছে পুরস্কার আশা করতেই পারে। সে ভাবেই তার মানষিক প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু শেষ বিচারের দিন, একটি পিপড়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করলো এবং অভিযোগটি যথার্থি আমোলযোগ্য।


এবার তার, বোধদয় হলো, পিপড়ের ক্ষতি তার ইচ্ছাকৃত ছিল না কিন্তু সে সাবধানীও ছিল না, ফলে তার কারনে পিপড়ের ক্ষতি সম্পর্কে সে বেখেয়ালী ছিল। শেষ বিচারে, পিপড়ের অভিযোগের ভিত্তিতে, একমাত্র সৃষ্টিকর্তার বিশেষ অনুগ্রহ, দয়া এবং ক্ষমা ছাড়া আর কোন গতি নেই। সারাজীবন ধরে তার কর্মের মাধ্যমে সে আর বেহেশতে যেতে পারছে না। এখানে ধর্মীয় চর্চার জন্য অনেকগুলো শিক্ষার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে-


১। শুধু কর্মের মাধ্যমে, কর্মফল দিয়েই বেহেশতে যাওয়া যাবে, এমনটা নাও হতে পারে। সারা জীবনের সাধনার পরেও কিছু ঘাটতি থেকেই যাতে পারে। শেষ বিচারে সৃষ্টিকর্তার ক্ষমা এবং বিশেষ অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী হতেই হবে।


২। অনেক সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম বিষয়েও অনেক বেশী সাবধানী হওয়া জরুরী। কেবল বাহ্যিক কিছু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই ধর্ম সীমাবদ্ধ নয়। ধর্ম গ্রন্থ সম্পর্কে খুব ভালো ধারনা রাখতে হবে এবং অতি সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম বিষয়েও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।


৩। অন্যের হক অর্থাৎ নিজের কারনে অন্যের যেন কোন প্রকার কোন ক্ষতি না হয় (কথা, কাজে, আচরনে ইত্যাদি) সে দিকটায় অনেক বেশী নজর রাখা জরুরী (আলোচ্য গল্পে সে কথাই বলা হয়েছে)


এরকম ভাবে কবি, ধর্ম চর্চার বাহ্যিক বিষয় ছাড়িয়ে তার অন্তর্নিহিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখার এক শিক্ষনীয় ইস্যু নিয়ে কাব্যটি রচনা করেছেন।


কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা