আলোচনা  ২০৭


একবার অফিসের কোন এক আলোচনা সভায় বলেছিলাম, বাংলাদেশে এখন পাসপোর্ট দেখেও শ্রেনী বিভক্ত করা যায়- ১) অল্প কয়েকজনের পাসপোর্টের পাতা শেষ হয়ে যায় (এতো বেশী বিদেশ ভ্রমন করে) ২) পাসপোর্ট থাকে কিন্তু মেয়াদ শেষ হয়ে যায় (কোন এক কালে পাসপোর্ট করেছিলো, হয়তো জীবনে একবারই গিয়েছিলো দেশের বাইরে আর যাওয়া হয়নি) ৩) সিংহভাগের (৯৯%) কোন পাসপোর্টই নেই। ইঙ্গিতটা বুঝে অফিসের কর্তাব্যক্তিরা ভয়ানক ক্ষেপে গিয়েছিলো আমার উপর।


আলোচ্য কবিতায় কবিও ঠিক একই রকম বলতে চেয়েছেন, শুধুমাত্র “পকেট” দিয়েই এখানে সব কিছু বিবেচনা করা যায়, শূন্য পকেট, ভরা পকেট,  আধাভরা পকেট, ছোট পকেট, বড় পকেট, লুকানো পকেট...


পকেটের আবার রকমফের আছে, হুজুর/ইমামদের পকেট (পায়জামার ভিতর কাপড়ের খুতি), শ্রমজীবি মানুষের পকেট (লুঙ্গির কোচর), অফিসজীবিদের পকেট (মানিব্যাগ), স্ত্রৈণদের পকেট (স্ত্রীর হান্ডব্যাগ), ভিক্ষুকদের পকেট (থালা/বাটি) ইত্যাদি। আজকাল মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত সমাজে পকেট খুব একটা আর ব্যবহার হয় না, এখন আধুনিকতার যুগে চলে প্লাষ্টিকের টাকা (ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড)। ফলে, পকেটকে আমরা সিম্বলিক হিসেবেই বিবেচনা করবো।


শুন্য পকেটে কি বেঁচে থাকা যায়? অন্তুত দীর্ঘদিন না হলেও কিছুদিন কি বাঁচা যায়?  নগর সমাজে দুটো প্রশ্নেরই উত্তর হবে নির্দিধায় হবে “না কিন্তু গ্রামীন সমাজে উত্তরটা একটু ভিন্ন হবে, অন্তুত দ্বিতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে। আধুনিকায়নের শহরে, একজন অন্যজনকে চেনে “পকেট” দিয়ে, এখানে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা কোন কিছুই পকেট ছাড়া চলে না, এক মুহুর্ত নিঃশ্বাস নেয়ার ও সুযোগ নেই পকেট ছাড়া, এমনকি এখানে “কথা বলা”, “কথা শোনা”... সবকিছুতেই পকেট ভার/ওজন লাগবে। গ্রামীন সমাজে অন্তর মনের সুখ দুঃখ শেয়ার করতে পকেট লাগে না, একজনের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পকেট লাগে না। নগর জীবনে যেমন, তৃষ্ণায় বুক ফেটে গেলেও পকেট শুন্য হলে পানি মিলবে না কিন্তু গ্রামীন সমাজে পকেট শুন্য মানুষের পোলাও বিরিয়ানীর অভাব হলেও, পানি, চিড়া, মুডি, গুড় এসবের জন্য অন্তত কিছুদিন হলেও বেচে থাকা সম্ভব।


পকেট শুন্য ঢাকা শহর  (নগর জীবন) জঙ্গলের মতো হিংস্র জন্তু জানোয়ারে জীবন অতিষ্ট, এখানে প্রানের কোন দাম নেই, একারনে, যার প্রাণ নাই (দোকানের শাড়ির, প্যান্টের মডেল) তার গাঁয়ে থাকে হাজার টাকার পোষাক আর যার প্রাণ আছে (পথশিশু) সে থাকে উলঙ্গ।


টাকায় উপচে পরা পকেট যেমন থাকে আবার তালি দেয়া পকেটও থাকে, দু ধরনের পকেট, মূলত মানব সভ্যতার অসভ্য দৃশ্যায়ন যা আমরা দেখি প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত। আমাদের জীবন মান, মানুষ হয়ে জন্ম হবার উপর নির্ভর করে না, সেটা নির্ভর করে পকেটের সাইজ এবং আকার আকৃতির উপর। কুকুর বেড়ালের কোন পকেট থাকে না, কিন্তু তারা বেঁচে থাকে, পকেট শুন্য মানুষও বেঁচে থাকে, সমস্যা কি?


কবি, সুবীর সেনগুপ্ল, “পকেট শূন্য, তাও বেঁচে থাকা” কাব্যে, মানব সভ্যতার আস্ফালন এবং পুজিবাদি  অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রনীতির উপর পাঠকে দৃষ্টি ফোকাস করেছেন বেশ চমৎকারভাবে। কবিতাটি আমার বেশ ভালো লেগেছে।


কবি’র জন্য রইলো শুভেচ্ছা