আলোচনা ১১৯


মধ্যবিত্তের চিরাচরিত চরিত্র, প্রতিনিয়ত তাদের নিজের সাথে দ্বন্দ্ব, সমসাময়িক বাস্তবতায় নিজেকে বিলীন করে দেয়া এবং দহনে দহনে নিজের হৃদয় পোড়া গন্ধে প্রতিদিন ক্ষয়ে যাওয়ার চিত্রায়ন করেছেন আসরের প্রিয় মুখ কবি জাহিদ হোসেন রনজু তার কাব্য “প্রাচুর্যের নিয়নবাতি’তে । তার কবিতা বরাবরই আমাকে টানে, একবার নয় বারবার পড়ি, সংগ্রহে রাখি। কেন?? আমি আমার না বলা কথার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।


মধ্যবিত্ত শ্রেণী এক অদ্ভুত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তার জীবন যাপিত করে। বেশীর ভাগ মধ্যবিত্তই স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করে, দুয়েক জন এর মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসে প্রতিবাদী চরিত্র নিয়ে আবার কেউ কেউ অতীত এবং ভবিষ্যতের মধ্যকার টানাপোড়নে নিজেকে দগ্ধ করে প্রতিনিয়ত।  কাব্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্য থেকেই দগ্ধ হওয়া চরিত্রের এক এক সফল চিত্রায়ন।


ফেলে আসা দিনগুলো, অভাবে জর্জরিত সংগ্রামগুলোর সাথে জড়িত থাকা মানুষগুলো কিংবা নিজের দারিদ্রতার সাথে জড়িয়ে থাকা সংগ্রামী সময়গুলো্কে অনেকেই ভুলতে পারে না, আবার নিজের বুক পকেটে সাথে নিয়ে চলতে পারে না যখন প্রাচুর্যের নিয়ন বাতি জ্বলে।  অনেকেই নিজের অস্বচ্ছল অতীতকে সামনে আনতে চায় না কিংবা পারে না, অতটা জোরালো মনের জোর অনেকেরই থাকে না। তাই কবি লিখেছেন-


ছবিগুলো আমার অস্বচ্ছল অতীত
আমার দারিদ্রতা
আমার নিন্ম-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তের কঙ্কালগুলোকে
প্রকটভাবে সামনে নিয়ে আসছিল।


পেছনে ফেলে আসা সময়গুলো অনেক সময়ই বর্তমানের ইচ্ছে অনিচ্ছে গুলোর সাথে খাপ খায় না, এমনকি পেছনের কোন কথা, কোন স্মৃতি, কোন ছবি বর্তমানের অর্জনকে চ্যালেঞ্জ করে, তাই সব সময় এক ধরনের ভয় কাজ করে মনে, অতীতকে লুকিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টা চলে।  এতকিছুর পরও কেউ কেউ তা ঝেড়ে ফেলে আবার কেউ কেউ খুব গোপনে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখে খুব যত্নে । রক্তের  টান, বাবা মা এর ছবি, তাদের অপরিসীম সেক্রিফাইস, তাদের অবদান  ভুলতে পারে না আবার বর্তমানে প্রাচুর্যের আলোয় খাপ না খাওয়ায় তা প্রকাশ্যে রাখতেও পারেন না।  এ এক ভিন্ন ধরনের যন্ত্রণার ছবি এঁকেছেন কবি।


প্রাচুর্যের আলো বাড়ার সাথে সাথে হয়তো বা এ যন্ত্রণারও অবসান হয়, চিরতরেই বিদেয় হয় অতীত। তাই কবি লিখেন-


আরও কিছুদিন এই প্রাচুর্যের নিয়নবাতির আলোতে
সাঁতার কাটলেই
রোদসী তোমার হাতগুলি আরও আষ্টেপৃষ্ঠে  আমাকে জড়িয়ে ধরলেই
হয়তো একদিন
ওগুলোও নষ্ট করতে পারবো আমি


শেষ লাইনটি আমার অসাধারণ লেগেছে, “এখন কেউ আলোর উৎস খুঁজে না, বর্তমান আলোতেই ভাসে”। অদ্ভুত এক সময়ের বাসিন্দা আমরা যেখানে অতীত ছাড়াই বর্তমান হাজির হয় ঝুপ কর। অনেকটা অবৈজ্ঞানিক ভাবনা, ভ্রুন ছাড়াই সন্তানের জন্ম হয়। সে অর্থে আমরা সবাই অবৈজ্ঞানিক, আমরা অন্ধ, আমরা অশিক্ষিত এবং আমরা এক নির্জীব প্রাণী।


কবির প্রতি রইল একরাশ শুভেচ্ছা। অসাধারন সব কবিতা উপহার দিয়ে আসরের সবাইকে দারুন ভাবে কবিতা প্রেমী করে তুলছেন।