আলোচনা  ১৪৩।


বেশ কিছু প্রচলিত শব্দ আছে যেমন –ভালো, মন্দ, সৎ, অসৎ ইত্যাদি, যেগুলো খুবই আপেক্ষিক। সংস্কৃতি ভিন্নতা এবং দেশ ও কালের ভিন্নতায় তার সংজ্ঞা এবং গ্রহনযোগ্যতা নানা রকম হয়ে থাকে, যে কারনে এগুলো আপেক্ষিক। আপেক্ষিক শব্দের অর্থই হলো, সবার কাছে একইভাবে, একই রকমের গ্রহনযোগ্যাতা থাকবে না ফলে তা আপাক্ষিক। কোন নির্দিষ্ট একটা মাপুনি দ্বারা মাপা যায় না বলেই একেক জন একেক ভাবে মাপে এবং নিজস্ব মতামত দিয়ে থাকে।


আবার দৃষ্টিভঙ্গিরও পার্থক্য থাকে, একই বিষয় একেকজন একেকভাবে দেখে, তার নিজের শিক্ষা, সংস্কৃতি, পারিবারিক পরিবেশে তার বেড়ে ওঠা, তার বোঝাপড়া, তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ইত্যাদির কারনে। সামাজিক, রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং ভিন্ন ভিন্ন মতবাদের কারনেও আপেক্ষিকতা তৈরী হয়। একইভাবে শ্লীলতা এবং অশ্লীলতা দুটো শব্দই আপেক্ষিকতায় মদদপুষ্ট।


কোনটা শ্লীলতা এবং কোনটা অশ্লীলতা, তার জাজমেন্ট দেয়ার মানদন্ড কি? পৃথিবীর সকল দেশেই এর মানদন্ড একই রকম হয় না। আমাদের দেশের সংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় আবহে নারীদের টপলেস থাকা অশ্লীলতা কিন্তু আমি নিজে অনেক আফ্রিকান দেশে গিয়েছি, সেখানে টপলেস না থাকাটাই অশ্লীলতা। টপলেস নারী সেই সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে।


এই কবিতাটি আলোচনার জন্য বাছাই করার একটি প্রধান কারন হলো, জাজমেন্টাল স্ট্যাট্মেন্ট দ্বারা পুরো কবিতার প্রেক্ষাপট তৈরী করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের প্রক্ষাপটে এবং ধর্মীয় কারনে পুরো বিষয়টি অশ্লীলতা দ্বারা আখ্যায়িত করতে পারি। কিন্তু এই কবিতাটিই যদি, ইংরেজীতে অনুবাদ করা হয় তাহলে ইংরেজী নেটিভ এর কাছে যেহেতু অশ্লীলতার কনসেপ্ট ভিন্ন ফলে কবিতাটির অর্থ তার কাছে বোধগম্য হবে না। কিংবা, নারীবাদী  (Feminism Perspective) কারো কাছে কি এই কবিতার মূল বিষয়বস্তু “অশ্লীলতা” থাকবে? উদারনৈতিক নারীবাদী কিংবা সামাজিক নারীবাদী (Socialist Feminist)  না হয়ে কেউ যদি Radical Feminist হয়ে এই কবিতা পড়ে তাহলে সে কিভাবে ব্যাখা করবে? ফলে স্বাভাবিকভাবেই কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়-


১। কবিতা কি দেশের সীমানা অতিক্রম করতে পারে না? ভাষার সীমা অতিক্রম করতে পারে না?
২। কবিতা কি Approach বা দৃষ্টিভঙ্গীকে এড়াতে পারে না?
৩। কবিতা কি বহু মানুষের মনকে নাড়া দিতে পারে না?
৪। কবিতা কি কেবলই ব্যক্তি কেন্দ্রিক,স্থান কেন্দ্রিক কিংবা মতবাদ কেন্দ্রিক?


মূলত উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে কবি ও কবিতার ভাবনাকে  ভিন্নভাবে ভাববার অবকাশ তৈরি করার জন্যই কবিতার আলোচনা। কবি’র প্রতি কোন বিরূপ মনোভাব কিংবা কবিতার ইস্যুর প্রতিও আমার কোন নেভেটিভ মনোভাব বা জাজমেন্ট নেই,, আলোচনার প্রয়োজনেই আলোচনাকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছি।


এবারে আসা যাক , কবিতা প্রসঙ্গেঃ


ধরে নিলাম, আমাদের দেশের এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের কারনে, কবিতায় উল্লেখিত বিষয়টি আসলেই অশ্লীলতায় পরিপুষ্ট।


কবি বেশ দৃঢ়তার সাথেই পুরো কবিতা জুড়ে অশ্লীলতার প্রতিবাদ করেছেন। খুব সুন্দর করে কিভাবে ধাপে ধাপে মানুষ অশ্লীলতার দিকে ঝুকে পরে, একটি সুন্দর সম্পর্কের ভেতর কিভাবে অশ্লীলতা ঢুঁকে পড়ে, অন্যরা এবং পুরো সমাজ বিষয়টিকে কিভাবে নেয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কবিতার বক্তব্য চিত্রায়ন করেছেন। শেষে একটি ধর্মীয় নৈতিকতা দিয়ে শেষ করেছেন “পরকালকে ভয় না করে ......”


অন্যান্য ধর্ম অশ্লীলতাকে কিভাবে দেখে বা সংজ্ঞায়ন করে, কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে অশ্লীলতাকে পরিহার করতে বলা হয়েছে সে সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারনা নেই (তবে ধারনা করি, কোন ধর্মই অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেয় না)। ইসলাম ধর্ম অশ্লীলতার বিরুদ্ধে ভয়ানক ভাবে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছেন। এমনকি, অশ্লীলতা করতে নিষেধ করেই ক্ষান্ত হয়নি রবং বলা হয়েছে অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেও না। কেনন সামান্য একটু ভালো লাগা, একটু এক সাথে পাশাপাশি হাটা কিংবা হাত ধরা কবি যেমনটা বলেছেন, সেটাকেই বলা হয়েছে ‘ধারে কাছেও যেও না”, শুরুটা ভালো হলেও সেটা ধীরে ধীরে অশ্লীলতার দিকে নিয়ে যাবে নিজের অজান্তেই কিংবা নিজের অসচেতনতার মধ্যে দিয়েই।


আমার কাছে সবচেয়ে বেশী ভালো লাগেছে, আমাদের ধর্মে মানে ইসলাম ধর্মে অশ্লীলতাকে যেভাবে ব্যাখা করা হয়েছে, যেভাবে ধীরে ধীরে মানুষ অশ্লীলতার দিকে ঝুকে পরে, পুরো কবিতাটি যেন তার ভিজুয়ালাইজেসন হিসেবেই দেখলাম বা পড়লাম।


কবির জন্য রইলো অফুরান শুভেচ্ছা।