বিশ্লেষণ -৪০


প্রতিশোধ শব্দের মধ্যে এক ধরনের নেগেটিভ ভাব থাকে এবং আচরণগুলোও নেগেটিভলি প্রকাশিত হয়। কিন্তু পজেতিভভাবে যে প্রতিশোধ নেয়ে যায় সে পদ্ধতিগত দিকগুলো আমরা শিখি না বলা যায় আমাদের শেখানো হয় না, ফলে আমরা ক্রমাগত এগ্রেসিভ হতে থাকি। প্রতিশোধ পরায়ণ হলে কেউ কেউ অন্যের ক্ষতি করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে আবার কেউ নিজের ক্ষতি করে অন্যের প্রতি প্রতিশোধ নেয়। কবি নাফিসা সারওয়ার ভিন্ন একটি ‘প্রতিশোধ নেয়ার পদ্ধতি’র প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তার কাব্য ‘প্রতিশোধ’ এর মাধ্যমে।  খুব অল্প কথায় চমৎকার একটি পদ্ধতির কথা বলেছেন, আমরা যদি এ পদ্ধতি ক্রমাগত প্র্যাকটিস করতে থাকি তাহলে একদিন সমাজ থেকে হিংসা, হানাহানি দূর হবে, একে ওপরের প্রতি অহেতুক আগ্রাসনী ভূমিকা পালন থেকে বিরত থাকতে পারবো ।


সাধারণত অন্য মানুষের ভাল থাকাকে কেউ কেউ খুব সহজভাবে নিতে পারে না, নিজের সাথে অন্যের তুলনা করে হীনমন্যতায় ভোগে, ফলে মুখে যাই বলুক অন্তরে থাকে অন্যের ভাল না করার, অন্যের ভাল না থাকার চিন্তা, অন্য কেউ ভাল না থাকলেই মনে মনে খুশী হয় (এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে)।  কবি নাফিসা অবলম্বন করেছেন ভিন্ন পদ্ধতি, নিজেকে সব সময় ‘ভাল আছি’, ‘খুব সুখে আছি’ এমন প্রকাশ ভঙ্গি রাখতে হবে যেন প্রতিপক্ষ ক্ষতি করা অপেক্ষা, নিজেই জ্বলে পুড়ে মরে, নিজেকে সামলে রাখতেই ব্যস্ত থাকে বেশী। নিজের খুশী খুশি ভাব দেখে অন্যে অন্যের কর্কশ চোখ, অন্যের হিংস্র থাবা যেন অস্তমিত থাকে।  আমার ভাল থাকাই অন্যের ক্রমাগত পুড়তে থাকবে ফলে সে আর আমার প্রতিপক্ষ হিসেবে কখনোই সামনে দাঁড়াবে না।  কবি লিখেছেন “অনেক আগুনের পরও যারা আমার হাসি কেড়ে নিতে পারেনি, আমারই সাফল্যে ওদের আজ রাত হোক নির্ঘুম” ।


অন্যের ক্ষতি করা কিংবা অন্যের প্রতি প্রতিশোধ করা অপেক্ষা নিজের উন্নতির দিকে নজর দিলে, আপনা আপনি অন্যে ঘায়েল হবে। প্রতিপক্ষের প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার কোন কার্যক্রমই হাতে নিতে হবে না, কেবল নিজের ভাল, নিজের উন্নতি, নিজের সুখ অর্জন হলেই প্রতিপক্ষের প্রতি প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যাবে।


নিজের ভাল করার মধ্য দিয়ে প্রতিপক্ষের প্রতি প্রতিশোধ নেয়ার এক চমৎকার পদ্ধতি উপহার দেয়ার জন্য কবির প্রতি রইলো অশেষ শুভেচ্ছা।