আলোচনা  ১৩৭


দীর্ঘদিন থেকেই সমাজের নানা শ্রেনী পেশার মানুষের সাথে “যোগাযোগ” ইস্যু নিয়ে কাজ করছি বিশেষ করে Social Behavioral Change Communication (SBCC) নিয়ে, এতে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে। অভিজ্ঞতার আলোকে নানা ধরনের থিওরী এবং মডেলও ব্যবহার করছি, তার মধ্যে Ecological Social Model (ESM) যা বেশ কার্যকরী মডেল।


হাল আমলে এখন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম এসেছে, নানা ধরনের এপস ব্যবহার হচ্ছে একে অপরের সাথে যোগাযোগ এর মাধ্যম হিসেবে। ট্যাকনোলজিক্যাল উন্নয়নে, পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়, তথ্যের ঘাটতি এখন আর নাই বললেই চলে। এক সময় বলা হতো তথ্যই শক্তি (Information is power) কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, তথ্য এক ধরনের বোঝাও (Informatin is Burden also) যদি তথ্যকে সঠিকভাবে কাজে না লাগানো যায়। তথ্য যেমন মানুষের উপকার করতে পারে আবার তথ্যই মানুষকে ধ্বংস করতে পারে। বিজ্ঞানের নব নব আবিস্কার, মানুষের কল্যানের জন্যই হয় কিন্তু মানুষ আবার এর অপব্যবহার করে মানুষের জন্যই অকল্যান বয়ে আনে।


কবি “সমাজ পরিবর্তনে সামাজিক যোগাযোগ” কবিতায় সে বিষয়টিই বলতে চেয়েছেন। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ‘ফেসবুক” বহুল আলোচিত এবং ব্যবহৃত। ফেসবুকের মাধ্যনা নানা অপকর্ম এবং বহু মানুষের ধ্বংস হয়ে যাবার খবর আমারা প্রতিদিনই পাচ্ছি। আমরা এখন প্রযুক্তিকে ছোট-বড়, তথাকথিত শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরীব নির্বিশেষে সবার হাতে তুলে দিয়েছে কোন প্রকার বাছ বিচার না করেই, এমনকি খুবই কম মূল্য হওয়ার কারনে যে কেউ ব্যবহার করতে পারছে। সেটা একদিকে খুবই ভালো কেননা, প্রযুক্তি ব্যবহারে কোন প্রকার বৈষম্য তৈরী করা হয়নি। কিন্তু প্রযুক্তির জ্ঞান, এর ব্যবহারের ভাল-মন্দ দিক, মাত্রারিক্ত এবং ভুল ব্যবহারে এর সামাজিক ও ব্যক্তিগত ক্ষতির দিকগুলো নিয়ে আর আলোচনা করনি, কোন প্রকার প্রশিক্ষন, কোন প্রকার সচেতনতা তৈরির কাজ করিনি, ফলে এখন অনেকেই এর ক্ষতির শিকার হচ্ছেন মারাত্মক ভাবে। ব্যক্তি জীবনে হতাশা থেকে শুরু করে পরিবারের ভাঙ্গন এবং নানা ধারনের অপরাধ ঘটে চলেছে প্রতিনিয়তই।


মানব জীবনের ইতিহাস কোন সময়েই বৈষম্যবিহীন ছিল না কিন্ত বৈষম্যগুলো এতট উন্মুক্তও ছিল না। এখন ফেসবুকের কল্যানে মানুষ প্রতি সেকেন্ডে এই বৈষম্যগুলো দেখতে পারছে, নিজের মধ্যে ক্ষোভ তৈরী হচ্ছে, যেমন-একজন প্লেনে করে কোথাও যাচ্ছে, ফেসবুকে ছবি দিচ্ছে অন্যজন বাসে করে যাচ্ছে, তার মনে প্লেন যাত্রার আকাংক্ষা খুব দ্রুত তৈরী হচ্ছে এবং যে কোন উপায়েই অর্থ উপার্জনের দিকে ঝুকছে। কেউ হয়তো ভালো কোন রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে, ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছে, সাথে সাথেই অন্নপ্রান্তে আরেকজনের মনে হতাশা তৈরী হচ্ছে। এভাবে প্রতিনিয়ত, প্রতিসেকেন্ডে, নিজের অজান্তেই একজন অপরজনকে ক্ষতি করছি, হতাশা তৈরী করছি, ক্ষোভ তৈরী করছি এবং পরে আবার আমরা নিজেরাই এই ক্ষোভ, হতাশা এবং জিঘাংসার শিকার হচ্ছি নানাভাবে।

কবিতার প্রথম ছত্রেই দেখা যায়, “খোঁজে তাতে মনের সুখ, মরীচিকার মারপ্যাঁচে বাড়ে দুখ”, ফেসবুক এবং সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমগুলো এখন এক ধরনের মরীচিকার মতোই আমাদের জীবনে দুঃখ নিয়ে আসছে (আগেই বলেছি, এর অনেক ভালো দিকও আছে)। এখানে কবি, কিশোর, যুব বয়সের দিকে তীব্র ইঙ্গিত করে বলেছেন, তারা যথেষ্ঠ পরিমান সময়ের অপচায় করে ফেসবুক এর মাধ্যমে। অহেতুক রঙিন স্বপ্ন তৈরী করে নিজেরাই অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়।


কবি পুরো কবিতা জুড়েই ফেসবুক তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে অকল্যাণের হুমকি হিসেবে দেখেছেন। অন্য একটি কবিতা হয়তো এর সব ভালো ভালো দিক নিয়ে লিখা হতেই পারে। কাজেই যে কোন প্রযুক্তির ভালো মন্দ উভয় দিকই থাকে, নির্ভর করে ব্যক্তি কিভাবে তা ব্যবহার করেছে এবং রাষ্ট্র যন্ত্র তা কিভাবে নিয়ন্ত্রিত রেখে সমাজের কল্যানের জন্য কাজ করছে।


প্রযুক্তির এক ভয়ংকর রূপ আছে, উপকার এবং অপকার, দুটোই এক্সট্রিম লেভেলে হতে পারে যদি তার উপর নিয়ন্ত্রন না থাকে। সেটা এট্ম বোম থেকে মিসাইল কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক কিংবা ম্যাসেঞ্জার। প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক, সভা, সেমিনারও থেমে নেই। সাহিত্য জগতেও প্রযুক্তি নিয়ে লিখা হচ্ছে নানা থ্রিলার, কবিতাও লেখা হচ্ছে। ফলে কবি শরীফ নবাব হোসেন তার কবিতার প্রযুক্তি তথা ফেসবুকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে লিখেছেন, আগামীকাল হয়তো কেউ এর ভালো ব্যবহার এবং উন্নয়নের অগ্রগতি নিয়ে লিখবে।


কবিতাটি সমসাময়িক ইস্যুতে ফোকাস করার কারনেই আলোচনার জন্য নির্বাচন করেছি।
কবির জন্য রইলো শুভেচ্ছা।