আলোচনা ১৭


কবিতাটি পড়ে প্রথম একটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল মনে, তার উত্তর খুঁজতে গিয়েই আলোচনার সূত্রপাত। নিয়মের মধ্যে থাকা আর শর্তের মধ্যে থাকা একই অর্থ বহন করে কিনা??  নিয়মের ব্যতিক্রম থাকে কিন্তু শর্তের কোন ব্যতিক্রম থাকে না। শর্ত ভঙ্গ করা যায় না, শর্ত ভঙ্গের শাস্তি হয় কিন্তু নিয়ম ভঙ্গের জন্য শান্তি হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। কবি রশিদ হারুন তার ‘শর্তহীন মানুষ’ কাব্যে নিশিতভাবেই শর্তের কথা বলেছেন। শিরোনামে ‘শর্ত’ থাকার পরও নিশ্চিত হয়ে চেয়েছিলাম, নিয়ম আর শর্ত গুলিয়ে যাচ্ছে কিনা?


নিয়ম তৈরি হয়, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা সঠিক ও সুচারুভাবে পরিচালনা করার জন্য, মানুষের জন্যই নিয়ম, মানুষই তা তৈরি করে আবার পরিবর্তন করে, আবার মানুষের প্রয়োজনেই নিয়মের ব্যতিক্রম থাকে। নিয়মের মধ্যে থাকতে বোধকরি কবি বিব্রত বোধ করবেন না।  প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজন ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে মানুষ কোন না কোন নিয়মের মধ্যেই থাকে। প্রকৃতিও চলে নিয়মের মধ্যেই। কিন্তু নিয়ম যখন শর্ত হয়ে উঠে তখনি বিপত্তি বাধে।


কাব্যে কিছু প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে নিবেদন করেছেন মানুষকে শর্তহীন রাখার জন্য, উদাহরন হিসেবে। কিন্তু মুলত, মানুষ কোন শর্তের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে পারে না। শর্তের মধ্যে মানবাধিকার থাকে না, মানবতা থাকে না, অধিকার থাকে না, বন্ধুত্ব থাকে না। শর্তের মধ্যে থাকে কেবল একে অপরের স্বার্থ রক্ষার তাগিদ, একে অপরের প্রয়োজন পূরণের চুক্তি। মানুষ তার প্রয়োজনেই একে অপরের স্বার্থ রক্ষা করবে, প্রয়োজন মেটাবে কিন্তু সেটা নিয়মের মধ্যে থেকে কোন শর্তের মধ্যে থেকে নয়, মনুষ্যত্ব হারিয়ে নয়।


মানুষ তার রাষ্ট্রের কাছে স্বাভাবিক জীবনের দাবী জানায়, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায়।  একটি নিরাপদ শহর চায় যেখানে নিরাপদে চলাচল করতে পারে, নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারে। ভালবাসার মানুষ ও বন্ধুর কাছে দাবী শর্তহীন ভালবাসা, শর্তহীন বন্ধুত্ব। ভালবাসায় আর বন্ধুত্বে কোন শর্ত থাকতে নেই।


সবশেষে, আক্ষেপ করে বলেছেন, মানুষের জন্ম কোন শর্ত দিয়ে হয়নি, কিন্তু জন্ম পরবর্তী মানুষের জীবন কাটে শর্তের শেকলে বন্দী হয়ে। জীবন অভিজ্ঞতায় কবি দেখেছেন, নিবেদন করেও মানুষের কাছ থেকে মানুষের মুক্তি মেলেনি, বার বার, যুগে যুগে মানুষ শর্তের শেকলেই বন্দি থেকেছে তাই ঈশ্বরের কাছে, সর্ব শক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করেছেন, জন্মপ্রক্রিয়ার মধ্যেই যেন ‘শর্ত হীনতা’ বজায় থাকে।  
এক কথায় কবিতার মূল বক্তব্য, শর্তের শেকলে বন্দী মানুষ আসলে মানুষ না, তারা আসলে কয়েদী কিংবা বন্দি হিসেবেই আখ্যায়িত হতে পারে।
কবির জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইলো