আলোচনা ৭৫


কবি সিবগাতুর রহমান তার কাব্য ‘শহুরে বৃষ্টি’তে অসাধারণ এক ছন্দের দোলাতে  বৃষ্টিকে কেন্দ্রে করে ফুটিয়ে তুলেছেন শহর এবং গ্রামের এক তুলনামুলক চালচিত্র। কবিতাটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল কবি নিজেও নস্টালজিক হয়ে পরেছেন, কবি যেন কিছুক্ষনের জন্য হলে ফিরে গেছেন তার শৈশবে, তিনি বেড়ে উঠেছেন সবুজ গ্রাম আর মানুষে মানুষের আত্মিক সম্পর্কের এক অনাবিল সৌন্দর্যের ছবিতে ভরপুর যে গ্রাম।  গ্রাম এবং শহরের বৃষ্টির মাত্রা কিংবা স্থায়িত্বের মধ্যে হয়তো কোন পার্থক্য নেই কিন্তু জীবনের আনন্দ বেদনার সাথে বৃষ্টির যে সম্পর্ক, বৃষ্টিকে কেন্দ্রে করে জীবনের যে প্রাকৃতিক ছন্দ, বৃষ্টির দিনে জীবনকে উপভোগের যে অপার সম্ভাবনা, সেখানে দু’ধরনের জীবন ধারার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য যা কবি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে, বাক্য বিন্যাসের সাথে কাব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন, পাঠককেও নস্টালজিক হতে বাধ্য করেছেন। শহুরে পাঠকের হৃদয়ে কিছুক্ষনের জন্য হলেও গ্রামে ফিরে যাবার আকুতি তৈরি করেছেন, নিদেনপক্ষে অবসর দিনগুলোতে ইট কাঠের শহর ছেড়ে গ্রামে সহজ সরল মানুষের সাথে এবং প্রকৃতির কাছাকাছির থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এখানেই কবি ও কবিতার সার্থকতা।


কবিতার প্রত্যেকটা স্তবকে ফুটে উঠেছে গ্রামে বৃষ্টির সৌন্দর্য এবং শহরে তার অভাববোধ, অসাধারণ এক তুলনামূলক চিত্রের মাধ্যমে কবি পাঠক মনকে আটকে রেখেছেন কবিতার প্রতিটি লাইন, শব্দ এবং ছন্দে, লিখেছেন- “শহুরে বৃষ্টি টিনের চালেতে, রিমঝিম সুরে বাজেনা, সাত রং মেখে আসমানটাও রংধনু রূপে সাজেনা”। ইট কাঠের এই শহরে এখন আর টিনের চাল নেই, ফলে টিনের চালে বৃষ্টির ফোটার যে ছন্দ, মনকে দোলা দেয়ার যে জাদুকরী ক্ষমতা বৃষ্টির থাকে সেটা শহরে আর খুজে পাওয়া যায় না।


শহরে কোন পুকুর নেই, তাই বৃষ্টির দিনে হাঁস দের দল বেধে মালার মত ঘুরে বেড়ানো আর দেখা হয় না। আমরা ছোটবেলায় বৃষ্টির দিনে যেভাবে কলা গাছের ভেলা নিয়ে গোসলে মেতে উঠতাম, গ্রাম্য দামাল ছেলে মেয়েরা যেভাবে ভেলায় চড়ে বেড়ায় তাতো শহরে দেখা যায় না, বৃষ্টির দিনে হালকা ঝরো বাতাসে আম কুড়ানোর সুখ শহরে ছেলেমেয়ারা এখন আর পায়ই না ইত্যাদি। কবি খুব চমৎকার ভাবে বৃষ্টি এবং গ্রামের জীবন এর সাথে শহরের জীবনের ছন্দের এক তুলনামূলক দৃশ্যপট তুলে ধরেছেন।


শহরে জীবন একেবারেই ভিন্ন, এখানে বৃষ্টি মানুষের মনকে দোলা দেয় না, উদাসী করে তোলে না, কেবল বেঁচে থাকার সংগ্রামে মেতে উঠে, জীবিকার টানে বৃষ্টির দিনেও  ছোটে কর্মসংস্থানের সন্ধানে। এখানকার জীবন প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলে না, এখানে চলে ঘড়ির কাটার তালে তালে।


কবির জন্য রইলো অভিনন্দন, খুব সুন্দর একটি বিষয় নির্বাচন করার জন্য।