কর্পোরেট সংস্কৃতিতে ‘ব্র্যান্ড’, ‘ব্র্যান্ড প্রমোশন’ খুবই পরিচিত শব্দ। আমারা যে কোন কিছু ক্রয় করার ক্ষেত্রে ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ দিয়ে থাকি। আবার সামাজিক প্রপঞ্চের ক্ষেত্রে ‘অথরিটি’ মেনে চলতে দেখা যায় অনেক বেশী।  কোন বিষয়ে কারো কারো কথা বলার ‘অথরিটি’ থাকে বেশী। জ্ঞান বিদ্যা কিংবা অভিজ্ঞতার চেয়েও ‘অথরিটি’ বেশী গুরুত্ব পূর্ণ হয়ে উঠে অনেক সময়।  চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে নিঃসন্দেহে মেডিকেল প্রফেসনালসগন ভাল জানবেন কিন্তু স্বাস্থ্য  বিষয়ে জনস্বাস্থ্য কিংবা সমাজ বিজ্ঞানীগণ ভাল জানতে পারেন কিন্তু স্বাস্থ্য  বিষয়েও কথা বলার অথরিটি মেডিকেল প্রফেসনালসদের, তেমনি কমিউনিকেশন মানেই জারনালিজম, জেন্ডার মানেই নারী, ইসলাম ধর্ম মানে দাঁড়ি টুপি, স্যানিটেশন মানে ইঞ্জিনিয়ার,  ডাটা মানেই পরিসংখ্যানবিদ ইত্যাদি।


ব্র্যান্ড এবং অথরিটি, দুটো বিষয়েরই সমাজে নানা ধরনের নেতিবাচক এবং ইতিবাচক দিক আছে।  নেতিবাচক প্র্যাকটিস এর কারনে সমাজে ‘ব্র্যান্ড পারসেপ্সন’ এর নানা বিরূপ প্রভাব দেখা যায়।  এই তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটেই নানা ধরনের প্রবাদ প্রবচন তৈরি হয় সমাজে, প্রতিদিনের কথা বার্তায়।  যেমন, কলুর বলদ, মাছি মারার কেরানী ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু বাস্তব নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ সেই শব্দকে ব্যবহার করে ঘৃণা কিংবা ক্ষোভ প্রকাশের জন্য যেমন- পলিটিশিয়ান, মীরজাফর ইত্যাদি।


‘ভেবে পাই নে’ কবিতায় কবি হুমায়ুন শরীফ (প্রবাসী কবি) তেমনি কিছু শব্দ নিয়ে ( পাগল, কবি, প্রেমিক, গাধা এবং পলিটিশিয়ান ) ব্যঙ্গাত্মক রূপে সামাজিক কিছু আচার আচরণকে প্রকাশ করেছেন। মেডিকেল শব্দকোষে ‘পাগল’ বলে কোন শব্দ নেই কিন্তু সামাজিক শব্দকোষে পাগল শব্দটি আমরা নানাভাবেই ব্যবহার করি অনেকটা নেতিবাচক ভাবেই।  ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াইনে...’ অর্থাৎ ভাল কাজ করলেও লোকে পাগল বলে। যে কাজ সচরাচর কেউ করে না, তেমন কাজকে সমাজ স্বীকৃতি দেয় না ‘পাগল’ বলে। ভাল মানুষকে একপেশে করে রাখার জন্য ‘পাগল’ ব্র্যান্ড দিয়ে থাকে।


কবিতায় সাধারণত প্রকৃতি (নদী ফুল পাখি) কিংবা প্রেম বিরহ বিষয়গুলো উপজীব্য হয় উঠে ফলে কেউ প্রকৃতি প্রেমিক হওয়া মানেই নেতিবাচক ভাবে কবি বলে আখ্যায়িত করা হয় যদিও সে কখন কোন কবিতা লিখেনি।  একইভাবে ‘আমি তো লোকের বোঝা বইনে’ তাহলে কেন ‘গাধা’ বলে?  অন্যের কোন উপকার করলে, অফিসে বেশী কাজ করলে... তাকে আড়ালে আবডালে ‘গাধা’ বলা হয়।


‘আমি তো কাউকে বাঁশ দেইনে, উন্নয়নের কথা বলে আখের গোছাইনে...’ বিদ্রূপ করে এ জাতীয় কাজ করলে তাকে ‘পলিটিশিয়ান’ বলা হয়। আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় দেখি পলিটিশিয়ানরা অন্যকে ‘বাঁশ’ দিয়ে থাকে কিংবা উন্নয়নের নামে নিজের আখের গোছায়ে নেন, তাই ‘পলিটিশিয়ান’ মানেই নেতিবাচক চরিত্র ‘ব্র্যান্ড’ দেয়া হয়।


সবশেষে কবিকে অনেক ধন্যবাদ, চমৎকার ভাবে ‘সামাজিক ব্র্যান্ড’ কে উপস্থাপন করেছেন, আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন, নেতিবাচক চরিত্রগুলোকে সমাজ কিভাবে দেখে আবার ভাল কাজকেও কিভাবে বিদ্রুপ করে একপেশে করা হয়।  অনেক শুভেচ্ছা রইলো, ভাল থাকবেন।