আলোচনা ০১


চাই সুখ, চাই -
তীব্র জ্বালার মহিমা;
জাগায় বেদনা অঙ্গার সম
দগ্ধ-বিলোল ছাই।
আধ-পোড়া কাঠ;
শিল্পীর ক্যানভাসে-
শাশ্বত ভাষা পায়।
দহনের পোড়া ছাই -
বিশ্বজনে দেখো কেমন
মূর্ত প্রতীক বনে যায়!


তুষের অনলে ঢাকা
দহনের চাপা ছাই
জাগায় বেদনা, পুলকের সুর,
আবেশের শিহরণ।
এমন দুঃখের পরশ বলো
কে না পেতে চায়
কে নয় মানে সুখের মরণ?


ব্যথা দেয়ার ব্যথা যে কী
বুঝবে তা আর কেউ
আমি জানি, আগুনও জানে
জানে বানের ঢেউ।


ব্যথা দেয়ার ব্যথায় আমি
কেমন কাতর হই;
কেউ দেখে না, হৃদয় জানে
কেমন দহন সই


সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবই মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। কোনটা কতটা বড় কিংবা ছোট সেটা সময়ের হিসেবে, একেক জনের জন্য একেক রকম। কিন্তু পুরোটা নিয়েই জীবন। আবার একটি ছাড়া অন্যটির অস্তিত্ব ঠিক অনুভবে আসে না।  কিন্তু ‘দহন’ সব কিছুকে ছাড়িয়ে, এক ভিন্ন অনুভূতি, যার মাত্রা নির্ধারণ করা খুব কঠিন। দহন কি কষ্টের এক মাত্রা উপরের কিছু কিংবা বেদনার এক মাত্রার নিচের কিছু? ঠিক তাও না। আসলে ‘দহন’কে দহন এর অনুভুতি দিয়েই বুঝতে হবে অন্য কোন শব্দের সাথে তুলনামূলক প্রেক্ষিতে বোঝা যাবে না।

‘দহন’ কবিতার এক চিরাচরিত উপজীব্য। দহনের নানা মাত্রা, নানা  রূপ, নানা রূপকের মাধ্যমে আমারা প্রকাশ করে থাকি, কখনও ছাই চাপা আগুনের সাথে, কখনও বা সিগারেট আগুন কিংবা অন্য কোনভাবে কিন্তু কবিরা কখনই ভালভাবে 'দহন' কে পুরাপুরি ব্যক্ত করতে পারেনি, সেটা কবির সীমাবদ্ধতা নয়, বলা যায় ভাষার সীমাবদ্ধতা । কবি তার অনুভূতিতে একইভাবে অনুভব করেন ‘দহন’ এর ভয়াবহতা ।


তাই বলে থেমে থাকে না কবির কলম। দহন তৈরি হয়, বিরহ থেকে, হতাশা থেকে, আবার কখনও বা সমাজের নানা অত্যাচার অন্যায়ের কাছে মাথা নত হওয়ার কারণে। কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল তার ‘দহনের সুখ’ কবিতায় অংকন করেছেন তেমনি এক দহনের চিত্র। আমারা যেমন কাব্য করে বলি ‘দুঃখ বিলাসী’ তেমনি কাব্যের প্রয়োজনে কবি লিখেছেন ‘দহনের সুখ’, আসলে দহনে কি সুখ থাকে নাকি দহনের মাধ্যমে সুখের চূড়ান্ত সুখানুভুতি পাওয়া যায়?


কবি ‘দহন’ কে এঁকেছেন তুষের অনলে পোড়া ছাই, বিশ্ব দরবারে উপস্থিত করতে চেয়েছেন ‘দহনের’ যন্ত্রণাকে, শিল্পীর ক্যানভাসে দেখাতে চেয়েছেন ‘দহন’ এর ভয়াবহতাকে।  ভেতরের এক না বলা কষ্টকে বলতে চেয়েছেন ‘কেবল দহনে পোড়া মানুষই বুঝতে পারে দহনের মাত্রা, অন্য কেউ নয়”। কেবল আগুন নিজে জানে তার পোড়াবার ক্ষমতা, বানের ঢেউ জানে তার উত্তাল আনন্দের নৃশংসতা।


সবশেষে এক করুণ আকুতি জানিয়েছেন, হৃদয় নিংড়ে দেখিয়েছেন কষ্টের ব্যথায়, দহনের যন্ত্রণায় কতটা নীল হয়েছেন, কিভাবে সহ্যের সীমা অতিক্রম করেও বেঁচে আছেন। দহনে যে পোড়ায় তার কাছে  কবির এক অভিব্যক্তি “ কেউ দেখে না, হৃদয় জানে কেমন দহন সই”


কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল, আপনাকে অভিনন্দন জানাই, চমৎকার একটি কাব্য উপহার দেয়ার জন্য। শুভেচ্ছা জানবেন, ভাল থাকবেন