একটু সাহায্য দে না
কয়টা টাকা দে না বাবা;
সচরাচর স্বভাবে, কখনো টাকা দিই
কখনো বলি, মাফ করেন;
ফেরী পারাপারে ব্যস্ত সময়, এবারো বললাম মাফ করেন।
অনেকক্ষণ পর,
ঘুরতে ঘুরতে, আবার সেই বুড়ী মা
আর কয়টা টাকা হলে
দুপুরে ভাত খেতে পারি;
দে না বাবা, কয়টা টাকা, ক্ষুধার কষ্টে আর বাঁচি না ।


২৫ বছর আগের
সেই আর্তি “ক্ষুধার কষ্টে আর বাঁচি না, আজও কানে বাজে;
বুড়ী মা’র জায়গায় নিজেকে দেখি
কতদিন, কত রাত না খেয়েছিলাম, হিসেব নেই
ক্ষুধার কষ্টে গায়ে জ্বর আসে, জানা ছিল না কোনদিন।


পেটে ক্ষুধা নেই
ক্ষুধার কষ্ট অনুভব হয়
রক্তের শিরায় শিরায় কথা হয়
স্বাধীন দেশে “ক্ষুধার কষ্টে আর বাঁচি না”, বুড়ি মা’র মুখে শুনতে হয়
লজ্জায় মাথা নত হয়
ধিক্কার দিয়ে নিজেকে জানান দিতে হয়
নিজের ক্ষুধার কষ্টের কথা বারবার মনে হয় ।


বুড়ি মা, আজ যা খেতে চান
তাই খাওয়াবো;
ফেরীর ক্যান্টিনে বসে, কি খাবেন?
রুই মাছের মাথা, আর কি?
গুরুর কলিজা, আর কি?
ট্যাংরা মাছের ঝোল, আর কিছু খেতে চান?
বাতাসী মাছের চড়চড়ি, আর...আর কি...


প্রান ভরে দেখবো আজ
নিজের ক্ষুধার্ত চেহারা দেখিনি কোনদিন;
ক্ষুধার্ত মানুষ কেমন করে খায়
একটু একটু করে, নাকি সব একসাথে
তারা কি চিবিয়ে চিবিয়ে খায়
নাকি, গোগ্রাসে খায়?


দর দর করে
চোখে অশ্রু ঝড়ে; আবেগে বুড়ী মা
৬০ বছর আগের জীবনে ফেরে;
বাবার আদরের
বড় মেয়ে,
রুই মাছের মাথা তারই জুটতো, বাবার আদর পেয়ে।


গৃহস্থ বড় ঘরে, স্বামীর সোহাগে
দিন কাটেনি একটুও অভাবে;
যমুনার ভাঙ্গনে সব শেষ
বাবা, স্বামী, জমি, হালের বলদ সব হারিয়ে
নিঃশেষ;
ছেলে মেয়ের ব্যস্ত জীবন
বুড়ি মা এখন আর নেই কারো আপন;


এত বছর পর
সেই স্মৃতি, সেই রুই মাছের মাথা
চোখের সামনে, কিভাবে সম্ভব? কল্পনায় গাথা!
সত্যিই রুই মাছের মাথা, নাকি চোখের ধা ধা।


অপরিচিত এক যুবকের
মুখের দিকে তাকায়, বার বার নিজেকে ভাবায়
আবেগে কণ্ঠ জুড়ায়;
রুই মাছের মাথা আর খাওয়া হয় না
ফেল ফেল করে তাকায়;
চোখের অশ্রুতে ভাতের প্লেট ভাসায়।


ভাতের কষ্ট
কেউ জানে না;
কেবল বুড়ি মা আর আমি জানি
ক্ষুধার কষ্ট;
সেদিনের সেই খরচ
আমার জীবনের ব্যয় শ্রেষ্ঠ।


জুলাই ২৭, ২০১৮
মিরপুর, ঢাকা