বাস্তবতার মুখোমুখি হলাম
খুব কাছে থেকে;
এক বাবাকে দেখলাম তার মেয়েকে
ট্রেনে তুলে দিতে এসেছেন
পাশাপাশি গোপনে মেয়ের প্রেমিকও স্টেশন এসেছে
প্রেমিকাকে বিদায় জানাতে ।


কিন্তু মেয়ের বাবা ট্রেনের জানলায়
দাঁড়িয়ে মেয়ের সাথে লম্বা
কথা বলতে শুরু করেছেন;
ভালো ভাবে থেকো,
ইন্টারভিউটা ঠিক মতো করো দিও, ইত্যাদি ।


মেয়ে বারবার বলছে, 'ঠিক আছে,
বাবা তুমি চলে যাও এখন
আমার সমস্যা হবে না;
বাবার এক কথা, '
আরে ট্রেন ছাড়ুক, তারপর যাই
একা একা ঢাকা যাবি ।


এদিকে একটু দূরেই চলছে
প্রেমিকের অস্থির পায়চারি;
শুধু ইশারায় কথা হচ্ছে প্রেমিকার সাথে;
বাবা জানলার পাশ
থেকে যাচ্ছেন না কিছুতেই;
ট্রেন ছেড়ে দেয়ার ও বেশি দেরী নেই।


মেয়েটার অস্থিরতা বাড়ছেই শুধু;
যদিও বাবার ভালোবাসার কাছে
প্রেমিকের ভালোবাসা তুচ্ছ;
তবুও দুটির ধরন
তো ভিন্ন ।


সে হিসেবেই হয়তো
মেয়েটা দুজনের থেকেই বিদায়
নিতে চাচ্ছে;
দেখতে দেখতে কেনো জানি
আমারও অস্থির অস্থির লাগতে শুরু করেছে
মনে মনে ভাবছি ছেলেটা অন্তত
একটা সুযোগ পাক
কাছে এসে একটু কথা বলার ।


কিন্তু কাজ হচ্ছে না
দুজনের মধ্যেই চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে;
না তা ঠিক না, তিন জনের মধ্যেই
হঠাৎ মেয়েটা তার বাবাকে বললো,
পানি কিনে দিতে
বাবা দৌঁড়ে পানি কিনতে গেলেন ।


সুযোগে প্রেমিক
এলো ট্রেনের জানলায়
আমার ভেতরে একটা ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে গেলো;
আরাম লাগছে খুব।
প্রেমিক আস্তে আস্তে
কয়েকটা  বাক্য বললো প্রেমিকাকে ।


আমি শুনতে পেলাম না;
মনে মনে ধরে নিলাম অনেক কিছুই;
দুর থেকে দেখলাম
মেয়ের বাবা হাতে পানির বোতল নিয়ে
দ্রুত আসছে;
ওরা খেয়াল করেনি এখনও
ধরা খেয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।


আমি দ্রুত গতিতে
তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলাম;
যাওয়ার সময় আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে বল্লাম
আপনার বাবা আসছে কিন্তু ।


আমার কথা শুনে প্রেমিকের প্রস্থান ঘটলো;
কিন্তু তারা দুজনই
আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে;
আমিও কিঞ্চিত মুচকি হেসে
জানান দিলাম ব্যাপারটা, যে
আমিও তাদের অস্থিরতার সঙ্গি।


হাসতে হাসতে দেখলাম ট্রেনের টিটিও
আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে;
আমিও হাসলাম ।
বুঝতে পারলাম তিনি আবার আড়াল থেকে
আমার ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন ।


ট্রেন ছাড়লো
মেয়ের বাবাকে দেখলাম জানলার সাথে সাথে
দৌঁড়াচ্ছেন আর কি যেনো বলছেন;
ওদিকে প্রেমিককেও দেখলাম
মেয়ের দিকে তাকিয়ে হাসছে;
বুঝতে পারলাম, মেয়ে তার
বাবাকে হাতে টাটা দিচ্ছে
আর চোখে টাটা দিচ্ছে প্রেমিককে ।


শেষে আমাকেও
বিদায় জানালো দূরে দাঁড়িয়ে
থাকা প্রেমিক;
আমি হাসলাম ।


কিন্তু খুশি হতে পারলাম না
কারণ আমি মনে মনে ভেবেছিলাম
ঘটনা এমন হবে,
ছেলেটা মেয়ের বাবার জন্য
চোখ ভরে তার প্রেমিকাকে বিদায় দিতে পারেনি;
আর তাই ট্রেন ছাড়ার সময়
লাফিয়ে উঠে গেলো ট্রেনে;
উঠে চমকে দিলো মেয়েটাকে ।


তখন মেয়েটা প্রচণ্ড খুশি হলেও বিরক্তির ভাব
প্রকাশ করে বলবে;
তুমি গাড়িতে উঠে গেলা কেনো ?
ছেলেটা লাজুক হাসি দিয়ে বলবে,
পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যায়;
তবু তোমাকে
দেখে শেষ করা যায় না


মেয়েটা লজ্জা পাবে
বলবে, পাগল একটা!!!


ফিনিশিং টা এমন হতে পারতো
কিন্তু হয়নি
রূঢ় বাস্তবতা ভিন্ন রঙ দিয়েছে


ট্রেন ছেড়ে দেয়ার পর মেয়েটা ঝিমুচ্ছে;
ঢাকা যাছে
গার্মেন্টস এর চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে;
বাবা মা’র দায়িত্ব কাধে নেয়ার স্বপ্ন নিয়ে।
ক্লান্তি আর অনিশ্চয়তা
ভর করেছে তার চোখে ।


আর প্রেমিক ছেলেটা
ভবঘুরে, বাদাইম্মা, বেকার ইত্যাদি
খেতাব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে;
যন্ত্রনাগুলো কাউকে বলতে পারছে না ।
উসখো খুসকো চুল বাতাসে উড়ছে
ফিরে যাচ্ছে
তার অনিশ্চিত গন্তব্যে ।


তাদের আবার দেখা হতে পারে
আবার নাও হতে পারে
বাস্তবতা তাদের আলাদা করে দিতে পারে
মেয়েটা ঢাকা গিয়ে
বদলে যেতে পারে
নুতন কোন প্রেমিক পেতে পারে;
আবার ছেলেটা
মানষিক চাপ সইতে না পেরে
ভিন্ন কিছু করে বসতে পারে;
অনেক কিছুই হতে পারে ।


আমিই সম্ভবত তাদের প্রেমের
একমাত্র তৃতীয় ব্যাক্তি, যে
কিনা এখনও
বসে বসে গল্পটা আরো ভিন্ন রকম
করে ভাবতে চেষ্টা করছি
নানা রঙয়ে রাঙিয়ে
দেয়ার আপ্রান চেষ্টা করছি ।


অক্টোবর ২৮, ২০২১
টোলারবাগ, ঢাকা
রাত ১২টা