আগে যখন চিঠি লিখতাম তোমায়
পঁচিশ কিংবা ত্রিশ বছর আগে;
তখন একটা সম্বোধন থাকতো
আজ নেই;
সম্বোধন’টা হারিয়ে ফেলেছি, বেশ ক’বছর হলো
তার জন্য আমি, তুমি অথবা দুজনেই দায়ী
থাক সে সব কথা;
সম্পর্কেরই যেখানে অবসান হয়েছে
সেখানে আর ‘সম্বোধন’ জানিয়ে কি হবে!!


কেমন আছি ? কিভাবে কাটছে দিন ?
কিভাবে সময় কাটাচ্ছি ? কি নিয়ে ভাবি? ব্যস্ততা কেমন?
সেসব জানতে চেয়ে বিড়ম্বনা করো না এখন আর
লুকিয়ে লুকিয়ে ডায়েরীও পড়ো না
সারাদিন কোথায় থাকি?
বাড়ি ফিরতে দেরী হলো কেন?  কিছুই জিজ্ঞাসা করো না
এসব জানার কোন প্রয়োজন নেই তোমার
তবু-
এটুকু না'হয় আগ বাড়িয়েই বললাম, "বেশ আছি"।


আমিও তোমার কোন খোঁজ রাখি না
আজকাল
তোমার নতুন জীবনের খবর রাখি না বলে
আমাকে অকৃতজ্ঞ বলতেই পারো,
ইচ্ছে করেই অপমৃত্যু ঘটিয়েছি
অনেক কৌতুহলের, সব ইচ্ছের ;
আকাঙ্ক্ষাগুলো নিজেই হত্যা করেছি
একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু হয়েছে বলতে পারো;


আমাকে নিয়ে তোমার সন্দেহগুলো
নিশ্চয় আগলে রেখেছো এখনো
অবশ্য এখন নাও রাখতে পারো;
‘সন্দেহ” রোগটা তোমার আগাগোড়াই ছিল
রোগ না বলে,
এটাকে আমি তোমার ‘ভালোবাসা’ বলি
তুমি মানুষকে অহেতুক ‘সন্দেহ’ করতে পছন্দ করো
ভালোবাসার চেয়েও ‘সন্দেহ’
করাটা বেশি পছন্দ ছিল
বোধকরি এখনো পছন্দ।
আমার ডায়েরীতে লিখে রেখেছি
“আমার লাশ দাফন করার সময় খেয়াল রেখো
চারপাশে কোন নারীর কবর যেন না থাকে”;
সন্দেহ জন্মাতে পারে,
কবরের নীচে দিয়ে অন্য কোন নারীর সাথে আমার দেখা হয় কিনা;
ডায়েরীর এই পৃষ্ঠাটা ভীষন ক্ষতের জন্ম দিয়েছে
সে তুমি বুঝবে না;
থাক, তোমার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো, নাই বা বললাম।


আমি কিন্তু একটু অন্যরকম ছিলাম
ভালোবাসার মানুষকে সন্দেহ করতে পারতাম না
সন্দেহ আর ভালোবাসা
দুটো একসাথে যায় না কখনোই
আমার জীবন দর্শন এমনটা বলে না;
ভালোবাসা মানে তো জমি দখল না
চর দখল না যে, জবরদস্তি দখল করে রাখবো!!
যে থাকার সে থাকবেই
না থাকার হলে, জরবদস্তি করে, প্রতিনিয়ত মনিটরিং করে,
সন্দেহ করে ধরে রাখা যায় না;
বোঝাতে পারলাম না
তুমি এই ভুলটাই করলে;
নিজের জেদের বশে ‘সন্দেহ’কেই আকড়ে রাখলে;
আমার আর কি করার ছিলো, বলো?


পুরুষ মানুষ নারী লোভি, পরকীয়ায় অভ্যস্ত,
এক নারীতে তুষ্ট হয় না…ইত্যাদি নানা বিশেষন জোটে কপালে
এর বিপরীতটাও যে হতে পারে
কেউ মানে না
আমি বিশ্বাস করেছিলাম, তুমি এর ব্যতিক্রম হবে
আমিও একটু ভিন্ন জাতের পুরুষ মানুষ;
আমার ভাবনায় ভুল ছিলো, বিশ্বাসে ভুল ছিলো
তুমি গতানুগতিক ধারনায় অটল ছিলে।


থাক সে সব কথা;
ভীষন একটা ক্ষত বহন করে চলেছি
তুমি কেমন আছো, জানি না;
অবশ্য, এখন একে অপরের
ভালো থাকা, মন্দ থাকা, বিষন্ন থাকা…
কোন কিছুতেই কারো কিছু যায় আসে না;
তুমি তোমার প্রয়োজনীয় উপকরন পাচ্ছো
সামাজিক মর্যাদা পাচ্ছো;
আমিও জীবন চলছে, চলে যাচ্ছে, এভাবেই আছি
ছেলে মেয়েদের প্রয়োজন, সংসারের প্রয়োজন পুরন করছি
এইতো, বেশ ভালো আছি
নিঃশ্বাসে বেঁচে আছি;
অথচ দুজনে, অনেক বছর ধরে
একই ছাদের নীচে বসবাস করছি!!! দুজনেই ভালো আছি!!!


মিরপুর, ঢাকা
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২, রাত ১২টা