বাংলা-কবিতার ভার্চুয়াল ফসলকে দৃশ্যমান করার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অর্ক প্রকাশনী। দুই লক্ষাধিক কবিতার সমৃদ্ধ ভাণ্ডার নিয়ে আমাদের এই বাংলা-কবিতার আসর। এতদিন যা ছিল শুধুই ভার্চুয়াল এখন তাকে দৃশ্যমান করেছে ‘অর্ক প্রকাশনী’! এ যেন স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন! আসরের কবিদের লেখা রচনাবলীকে সহজে ও মানসম্মত উপায়ে গ্রন্থাকারে রূপ দেয়ার মহান দায়িত্ব নিয়েই বাংলা-কবিতার অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান – ‘অর্ক প্রকাশনী’র জন্ম।


নিজের লেখাটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করব – এ ছিল আমার জন্যে বিলাস কল্পনা। এক স্বনামধন্য প্রকাশনীতে ‘তোমার টানে’ বইটি আমার ২০ নভেম্বর প্রকাশিত হবার কথা ছিল। দীর্ঘদিন আশায় থেকে থেকে যখন তারা ব্যর্থ, কোন যোগাযোগই করা যাচ্ছিল না - ঠিক তখনই আমার বিশেষ তারিখ ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে বইটি প্রকাশ করার দায়িত্ব নিলেন অর্ক প্রকাশনীর প্রকাশনার দায়িত্বে থাকা কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারিনি; দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে (আমার বিশেষ তারিখের আগেই) ৩ ডিসেম্বরেই তিনি আমাকে উপহার দিলেন একটি উন্নতমানের বই।


আমার পরম সৌভাগ্য যে অর্ক প্রকাশনী আমার বইটি নিয়ে এর বানিজ্যিক প্রকাশনার যাত্রা শুরু করেছে। আর এত অল্প সময়ে যে এমন উন্নতমানের বই পাওয়া যায় তা যেন আমার কল্পনাকেও হার মানিয়েছে! আমার জানা মতে; অর্ক প্রকাশনী থেকে এসপ্তাহেই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আসরের কবি খলিলুর রহমানের ২য় একক কাব্যগ্রন্থ ‘বেলা শেষের রঙ’।


উল্লেখ্য যে, বাংলা কবি-কবিতা আসরের শ্রদ্ধেয় কবি অনিরুদ্ধ বুলবুল নিজে বইগুলোর সম্পাদনা করছেন, যা খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। বইয়ের গুনগত মান তো বটেই বইগুলোর কবিতা শৈলী থেকে এর প্রস্ফূটন, অলংকরণের নান্দনিকতার অভিনবত্ব ইত্যাদি বিশেষভাবে আমার নজর কেড়েছে। আমার বিশ্বাস; ব‌ইগুলো হাতে নিলে যে কেউই আমার সাথে একমত হবেন। আমার বইটি প্রকাশ করতে গিয়ে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা নিচে তুলে ধরছি:


* অত্যন্ত কম সময়ে এবং কম মূল্যে উন্নত মানের বই ও সেবা।
* বানান শুদ্ধতাসহ কবিতার বাক্যশৈলী ও কাব্যিকতায় এমন চমত্কার নান্দনিক বিন্যাস আনা হয়েছে যা - আমার ধারণার মধ্যেও ছিল না।
* প্রকাশনার জগতে যেখানে এডিটিংয়ের জন্যও মূল্য পরিশোধ করতে হয় সেখানে নতুন হওয়া সত্ত্বেও নিখুঁত পেশাদারীত্ব বজায় রেখে সময়কে মূল্য দিয়ে বিনামূল্যে নিজদায়িত্বে বইটির এডিটিং থেকে শুরু করে নকশা প্রণয়ন, ছাপা, বাঁধাই প্রতিটি ক্ষেত্রে যত্নের ছাপ যে কারোরই চোখে পড়ার মত।  
* লেখকের আবেগকে মুল্য দিয়ে কভার ডিজাইন থেকে শুরু করে এডিটিং ও প্রুফের প্রতিটি পর্বে তিনি আমাকে এবং ‘বেলা শেষের রঙ’-এর কবিকে বারে বারে নমুনা পাঠিয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন, যা আমার জানামতে কোন প্রকাশকই করবেন না। সবচেয়ে বড় কথা; বইটি বাস্তবে হাতে নিয়ে দেখা এমন কি প্রেসে যাবার আগেই আমি আমার বইটির রূপায়ণ পর্বের বাস্তব চিত্রটি পিডিএফ কপির মাধ্যমে দেখতে পেয়েছি যেখানে একটি দাঁড়ি কমার পর্যন্ত ভুল ধরতে পারিনি।


একজন কবি যখন আন্তরিকতার সাথে নিজেই সম্পাদনার গুরুদায়িত্বটি পালন করেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে লেখকের চিন্তা-চেতনা ও আবেগের সাথে সমন্বয় করে কবিতার কাব্যমান বজায় রেখে প্রকাশনায় যান তখন লেখক নিশ্চিন্তে নির্ভর করতে পারেন আর সে প্রকাশনা নিয়ে গর্বও করা যায়।


অর্ক প্রকাশনা’র এই নতুন উদ্যোগে তাই আমি কবিদের প্রাণের স্পন্দন শুনতে পাই। আমার বিশ্বাস ‘অর্ক প্রকাশনী’ হবে বই প্রকাশেচ্ছু কবিদের স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম। ‘অর্ক প্রকাশনী’ নিশ্চয় একদিন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রকাশনা নিয়ে হাজির হবে এমন প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। শুভ হোক এর পথচলা।