আমি ভেবেছিলাম
সকালে নিজেই নিজের নাস্তা তৈরী
করে, খেয়ে অফিসে গেলে
তোমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে না;
তুমি ভাবলে,
তোমার হাতের নাস্তা এখন আর আমার পছন্দ হয় না।


আমি ভেবেছিলাম
সারাদিন আমার মানষিক চাপের কথা নাই বা বলি
শুধু শুধু আমার নিজের অস্থিরতা
তোমার মধ্যে ট্রান্সফার করা হবে;
তুমি ভাবলে,
আমি তোমাকে অবহেলা করে কিছু শেয়ার করি না।


আমি নিজের পকেট খরচ রেখে
সংসার খরচের পুরোটাই তোমার হাতে দিই
না চাইতেই তোমার কেনা কাটার টাকাও দিই
যেন নিজের ইচ্ছেমত, নিজের পছন্দনুযায়ী কেনা কাটা করতে পারো
নিজের স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারো;
আমি ভাবলাম
প্রত্যেক মানুষই স্বাধীনতা উপভোগ করতে চায়;
তুমি অভিমান করে থাকলে,
ভেবে নিলে
আমি কেন গিফট কিনে দিই না ! এটা এক ধরনের উন্নাসিকতা।


আমি  কখনোই, কোন কিছুতে রিয়েক্ট করি না,
তরকারীতে একটু ঝাল বেশী হলে, ভাত পুড়ে গেলে কিংবা
লবন বেশী হলে
কিছুই জিজ্ঞেস করি না, কোন অভিযোগও করি না
আসলে আমি বিষয়গুলো আমলেই নিই না
আমি ভাবলাম
মাঝে মাঝে একটু খারাপ তো হতেই পারে; ওভারলুক করাটাই ভালো
তুমি ভাবলে,
আমি উদাসীন, তোমার সারাদিনের রান্নার কষ্টের মূল্যায়ন করি না।


আমি কিছুই জানতে চাই না
তুমি কোথায় যাও, কখন ফিরো,
কার সাথে কথা বলো, কেন যাও? কিংবা
বলে গেলে না কেন?
কোন প্রশ্ন করি না, কিছুই জানতে চাই না;
আমি ভাবলাম,
এটা ব্যক্তি স্বাধীনতা,
একজন মানুষের চূড়ান্ত ইচ্ছে,
তুমি এটা এনজয় করবে;
কৈফিয়ত দেয়া বা অনুমতি নেয়া আর
নিরাপত্তার জন্য বলে যাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য
প্রয়োজন হলে নিজেই বলবে;
তুমি ভাবলে,
আমি তোমার বিষয়ে সব সময় নির্বিকার, নির্লিপ্ত।


আমি কখনোই
নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছে, চাপিয়ে দিই না
দিনে কিংবা রাতে কখনোই জবরদস্তি করি না
ছুটির দিনগুলোতেও আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখি নিজের মতো করে
আমি ভাবলাম,
এটা যৌথ ইচ্ছের ব্যাপার
জবরদস্তি এক ধরনের অত্যাচার;
তুমি ভাবলে
আমার জৈবিক চাহিদাগুলো পুরন হয় ঘরের বাইরে গিয়ে, অন্য নারীতে
সন্দেহের তীরে বিদ্ধ করলে।


আমি ভাবলাম
ভালোবাসা প্রকাশের বিষয় না,
উপস্থাপনের বিষয়তো নয়ই
অনুভবের মাত্রা, অনুভূতির তীব্রতাই এর সূচক
তুমি ভাবলে
আমার ভালোবাসা মরে গেছে কিংবা
আমি আসক্ত পরকীয়াতে এবং বহু নারীতে;
আমি সন্দেহকে ঘৃনা করতে শিখেছি
তুমি সন্দেহকে বরন করতে শিখেছো।


আমি কখনোই অন্যকে অনুকরন করতে চাইনি
আমি আমাকেই দিতে চেয়েছি;
অন্যের মতো, তোমার খোপায় ফুল গুজে দেয়া
বিশেষ দিবসে ফুলের তোরা কিংবা অন্য কোন গিফট দেয়া
সারাক্ষন “ভালবাসি” ফুটিয়ে তোলা;
এসব আমি করিনি, করা দরকার মনে হয়নি কখনো;
আমি ভাবলাম
এটা গতানুগতিক, এর মধ্যে কোন আলাদা গৌরব নেই
আমার ভিন্নতাই তোমার পছন্দ;
তুমি ভাবলে
আমি ভালোবাসতে জানি না, আমি মোটেই রোমান্টিক না


আমি রবীন্দ্র ভক্ত
মান্নাদে, সতিনাথে আসক্ত
আমি কবিতা প্রেমিক
বই পড়াতে নেশাগ্রস্ত;
তুমি আধুনিক গান, ব্যান্ডের শ্রোতা
বই তোমার কাছে বিষের মতো পরিত্যাক্ত;
আমি ভাবলাম
বৈপরীত্য খারাপ না
অনেক অমিলের মধ্যেও মিল হতে পারে
যদি অন্যের পছন্দের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে বারে বারে;
তুমি ভাবলে
আমি জীবন্ত লাশ, প্রবীন, মনে মনে বয়োবৃদ্ধ
এভাবেই চলতে থাকলো অ-মিলের যুদ্ধ।


অহেতুক কেনা কাটা আমার অপছন্দ
হাল আমলের সাথে তাল মিলিয়ে চলাতে
নেই জীবনের মূল ছন্দ;
আমি অল্পতেই তুষ্ট
বই পড়া, জীবন দর্শনে থাকাই জীবন ঘনিষ্ট;
তুমি ফ্যাশন সচেতন
নিত্য নুতন আধুনিক ডিজাইনের ভক্ত
তাতেও আমার আপত্তি ছিল না শক্ত।
আমি ভাবলাম
যে যেভাবে ভালো থাকতে পারে
সেটাই দম্পত্য জীবনের মূল শর্ত
অন্যের ক্ষতি না হয়, ইচ্ছেটাকে মানা হয় পবিত্র;
তুমি ভাবলে
আমি অ-আধুনিক, আমি সেকেলে
ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে শুরু করলে সকালে বিকেলে।


আমি ভোজন রসিক নই
ক্ষুধা ব্যতীত খাওয়া আমার অপছন্দ
যদিও সিগারেট আর কফি পানে আমি অক্লান্ত;
বই, রবীন্দ্র সঙ্গীত, কফি, সিগারেট
আমার অন্যতম আকর্ষন
গাড়ি বাড়ি, পর-নারী, তাড়ি আমার ততোটাই বিকর্ষন
আমি ভাবলাম আমি এমনই;
তুমি ভাবলে
আমি অনুভূতিহীন, নিরান্দহীন এক নিরামিষ প্রানী
আমার পরিবর্তন হওয়া দরকার এখনই ।


আমার প্রতিদিনের ভাবনাগুলো, অভ্যাসগুলো
তোমার সাথে মেলে না কিংবা
আমিই তোমার সাথে মেলাতে পারি না;
তিন দশকেও
আমি তোমাকে বুঝতেই পারলাম না
আর, তুমি বুঝতে চাইলেই না।


মে ৩১, ২০২২
মিরপুর, ঢাকা
বিকেল ৪ টা