কৈশরে কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে কাকতলিয় ভাবে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব। যা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দুই দশকের ও বেশি কেটে যায়। সেই বন্ধুর অকাল প্রয়ানে আমি মর্মাহত, শোকাস্তব্দ। অগোছালো ভাবে বন্ধুর স্মৃতিচারন, ও আত্মার শান্তি কামনা করে তাঁকেই উৎসর্গ করলাম।


বন্ধু--
তুমি নাই।
বললেনা যাই।
নিরবে নিলে বিদাই।
ডাকলেনা এসো ভাই।
বিরহ বক্ষে বাজে তাই।
প্রতিক্ষনে তোমার স্পর্শ খুঁজেপাই।
প্রার্থনা ছাড়া আর মোর কিছুই করার নাই।
সুখ তোমাকে দেয়নি ধরা, দুখের মাঝেই খুঁজেছ সুখ।
ভুলেও কভু করনি মন মরা, হেঁসেই সয়েছ সব দুখ।
পরিজনকে রাখতে সুখে, দেখেছি অমানসিক কর্মজেদি মুখ।
পরিশ্রমে হয়েছ কাহিল, কখনো বেজার হয়নি তোমার মুখ।
পেয়েছিলে যা কিছু, মাগনি তা-কিছু।
মেগেছিলে যা কিছু, পাওনি তা-কিছু।
অর্থাভাব তোমার ছাড়েনি পিছু।
চেস্টার ত্রুটিও তেমন ছিলনা কিছু।
চির বিদায় নেবার ক্ষনে,
খুঁজে ছিলে মোরে প্রান পণে।
শেষ ক্ষনে বাঁচার সাধ জেগে ছিল মনে।
হয়ত বা কিছু কহিবার ছিল মোর সনে।
শেষ আশাও আর হ’লনা পুর্ন, নিরাশায় হৃদয় তাই চূর্ণ বিচূর্ণ।
যখন আজরাইল দাঁড়িয়ে শিয়রে, তখনও তুমি কহিলে ভাবি-রে।
দুনিয়া হয়ত ভুলে যাবে মোরে, সে-বন্ধু আমার কভু ভুলবেনা-রে।
নিলাম বিদায় রেখে তাঁকে অন্তরে, জানিও করেছি ফোন হরেক নাম্বারে।
পেলাম সংবাদ তিনমাস পরে।
গেছ চলে আমাহতে বহু দূরে।
সংবাদের আকস্মিকতায় শরীর ক্ষিন।
কিংকর্তব্য বিমুড় গন্তব্য দিশা হীন।
উদভ্রান্তবস্তায় ছুটেছি তোমার ঘরে।
তুমি তখন শুয়ে আছ তোমার কবরে।
ফিরছিল ছন্দে সব ত্যাগিয়া শোকতাপ।
মোর হাজিরি দিল বাড়ায়ে বিয়োগত্তাপ।
মাতা কন—
বাবু তুই সেই যদি এলি! তবে এতদিন পরে কেন?
আগে এলে হয়ত বেঁচে যেত, মোর বেটা যেন তেন।
তোরা মোবাইল চালাস, বুঝিনে নাম্বার বদলাস কেন।
মোর শূন্য কোল খোকা কি বলব বল, রাগ করিসনে যেন।
সন্তান হারা মাতাপিতা স্বামি হারা স্ত্রী, পিতা হারা সন্তান।
কিভাবে দেব সান্তনা জোটেনি ভাষা, আমি নিজেই বিরান।
রেখে গেলে স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তান।
ভাষা হারিয়েছি শান্তনার, নিরশ জবান।
ছিলাম তাকিয়ে কবর পানে সজল নয়নে।
লতাপাতা জন্মেগেছে কবর খানার বহুস্থানে।
তুমি দেখেছ কি! অশ্রুশিক্ত ভারাক্রান্ত মনে।
ছিল দাঁড়িয়ে তোমার স্ত্রী ও দুই সন্তানে।
বলে যান ভাবি---
পথ্যের আর কাজ নাই, জবাব দিয়েছিল ডাক্তার।
মর্মান্তিক যন্ত্রনার দৃশ্য ভাই, দেখাও কঠিন যন্ত্রনার।
একটু সুস্থবোধ করলে্ই, খুঁজত বই খাতা, ভাবত পেয়ে যাবে নাম্বার।
খুঁজেছিল সবখানে, সে খাতাটি ছাড়া, যে-খাতায় ছিল তোমার নাম্বার।
সাধ হছে আনারশ খাওয়ার, আছে কি কিছু টাকা কড়ি?
বন্ধু মোর বলেছিল একবার, আনারশ নাকি খুব উপকারি।
কঠিন ব্যামোয় সব শেষ, যা ছিল টাকা কড়ি।
এদিক ওদিক থেকে, পে্লাম টাকা গোটা কুড়ি।
বিনি টিকিটে, ট্রেনে চেপে, যাই বারাসাত।
ফলওয়ালা দর হাঁকে, আনারশ পুরো ষাট।
আছে কাছে মোর, মোট কুড়ি টাকা, দাওনা ভাই।
অসুস্থ স্বামী করেছে সাধ, সে শুয়ে আছে সজ্জায়।
বহু কাকুতি মিনতির পর, দিল আধ পচা এক আনারশ।
আঁখি জলে, লুকায়ে আঁচলে, বাড়িতে আনি সে আনারশ।
বাদ সাদ দিয়া, ছোট এক বাটিতে, পশারিনু সে আনারশ।
বলে হেঁসে- দিয়েছ ছেলেটাকে, ও খুব ভালবাসে আনারশ।
বেদনায় হৃদয় মোর যায় ছিঁড়ে—
যা ছিল তাকেই দিয়েছি তা বলি কি করে!
বললাম দিয়েছি গো দিয়েছি, তুমি ওইটুকু খাও।
বলে সে আমাকে- আমি চিনি তোমাকে, এইটা ছেলেটাকে দাও।
বড় সাধ ছিল তার দেখা পাবে তোমার, তুমি রাখবে হাত তার শিরে।
তুমি দেরিতে এলে ভাই, তোমার পেলোনা দেখা তাই, গভির ঘুমে শায়িত সে কবরে।
কিভাবে রাখবে হাত তার শিরে?