মনের গভীরে এক আদিম অরণ্য বিস্তৃত,
যেখানে বিশ্বাস এক শিকড়বদ্ধ মহীরুহ,
আর যুক্তি তার ছায়ায় লুকিয়ে থাকা এক বিদ্রোহী শৈলশিরা।
বিশ্বাসের অস্তিত্ব প্রমাণের প্রয়োজন হয় না—
সে আকাশের মতো, অদৃশ্য অথচ সর্বত্রব্যাপ্ত।
অন্যদিকে, যুক্তি এক তীক্ষ্ণ কুঠার,
যা প্রতিটি অনুভূতিকে ক্ষতবিক্ষত করে,
প্রতিটি প্রতিজ্ঞাকে রক্তাক্ত সন্দেহে রঞ্জিত করে।
মানুষের মন এক চিরন্তন দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র, যেখানে ঈমান আর সংশয়ের মধ্যে অনির্ধারিত যুদ্ধ চলে।
বিজ্ঞান কি একমাত্র সত্যের বাহক?
ধর্ম কি কেবলমাত্র এক শৃঙ্খলার স্থপতি?
পরকাল কি কল্পনার অলীক প্রান্তর?
এসব প্রশ্ন শ্বাসরুদ্ধ করে,
কিন্তু একই সঙ্গে প্রমাণ করে যে মন এখনো জীবিত,
যুক্তির দহনজ্বালায় বিশ্বাসের কুঁড়ি ধ্বংস হলেও তার চিহ্ন মুছে যায় না।
বিশ্বাস কখনো আকস্মিক জন্ম নেয় না;
এটি এক দীর্ঘ অনুশীলনের ফসল।
অন্ধকারের শেষে আলোর উপস্থিতি যেমন প্রশ্নাতীত,
তেমনই কিছু সত্য অনুভূতির অতল গহ্বরে প্রবাহিত হয়, যেখানে যুক্তির শীতল স্পর্শ পৌঁছায় না।
সূর্যোদয়কে কেউ বিশ্বাস করে না—
তার কারণ সে দৃশ্যমান, প্রত্যক্ষ।
কিন্তু যা অদৃশ্য, যা উপলব্ধির অতীত,
তার প্রতি যে আত্মসমর্পণ, সেই তো প্রকৃত বিশ্বাস।
বিশ্বাসীরা কখনো নিছক আত্মসমর্পণকারী নয়;
তারা ঘোষণা করে, প্রমাণ করে,
যেন তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ এক অদৃশ্য সত্যের প্রতি আনুগত্যের প্রতিচ্ছবি।
কিন্তু যুক্তি বিশ্বাসের অনড় মর্মমূলে এসে ধাক্কা দেয়,
তার প্রতিটি ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে,
তার প্রতিটি স্তম্ভে ফাটল ধরায়।
প্রমাণিত সত্যের জন্য বিশ্বাসের প্রয়োজন হয় না;
বরং বিশ্বাস জন্ম নেয় তখনই, যখন সংশয়ের ছায়া দীর্ঘ হয়।
এই দ্বৈরথে মানুষ বুকপকেটে বিশ্বাস লুকিয়ে রাখে,
আর হৃদয়ের দরজায় যুক্তির তালা ঝুলিয়ে রাখে।
তার অস্তিত্ব দ্বিধাগ্রস্ত,
তার পথচলা অস্থির, তবু নিরবিচার।
বিশ্বাস আর যুক্তি—একটি অবিনশ্বর শিকড়, আরেকটি নির্মম ফলক।
সংঘাত আর সহমতের মধ্য দিয়ে তারা বুনে চলে মানুষের আত্মা,
জাগিয়ে রাখে তার অন্তর্লীন স্পন্দন।
=========