ভার্সিটির করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময়
রোজ দেখা হতো তোমার সঙ্গে।
তুমি মুচকি হাসতে,
কখনও বা গান গাইতে গাইতে চলে যেতে।
কিন্তু তোমার গান আমি বুঝতেই পারতাম না!
কখনও বা বলতে, 'হাই'।
সাক্ষী থাকতো বয়ে যাওয়া হওয়া
কারণ কাজের চাপে ঘড়ি দেখার সময়ই ছিল না!



আমরা দুজনে এসি-তে ঘাম শুকাতাম-
দুজনেই গায়েই থাকতো এক সমুদ্র নোনা ঘাম।
তবে ঘাম এখানে কোনও খারাপ অর্থ বহন করে না-
শরীরের তাপে নয়, প্রকৃতির উত্তাপেই তার জন্ম!



রোজ বিকেল চারটের সময় দুজনে চা খেতে যেতাম।
কত লোক কত টোন কাটতো-
একসাথে একবার চা খাওয়াটাও যেন সামাজিক অপরাধ!
যেদিন শেষ চা খেয়েছিলাম দুজনে-
তোমার চায়ের কাপে তোমার ছায়া দেখতে পেলাম-
মনে হল বিচ্ছেদ ও বিষণ্ণতা দুইই আছে।  
আমি ছিলাম নির্বিকার।



পড়াশুনা করেছি একসাথে।
ভাবের থেকে ঝগড়া ছিল বেশি।
আমার সব জ্ঞানকে ভুল প্রমাণিত করে
তুমি উঠতে চাইতে উপরে।
আমি অবহেলা সহ্য করতে না পেরে
চেয়ে থাকতাম আকাশ পানে।
খুঁজতাম কোনও মেঘপরীকে।
মেঘপরীর দেখা পেতাম না আমি
কারণ আগের দিন রাত্রে বৃষ্টি হয়ে গেছিলো,
আর জলপরী আমার সামনে বসে বইয়ের পাতা উল্টোত।



বহুদিন তুমি ছিলে আমার সহযাত্রী।
কত বড় একটা জীবনের কয়েক মুহূর্ত
আমার একসাথে চলেছিলাম।
এ ভালোবাসা মুহূর্তে আসে, মুহূর্তে চলে যায়।
যাত্রাও তাই চিরতরে থেমে যায়।



তুমি আমায় কাজে প্রচুর সাহায্য করেছিলে-
তোমার সাহায্য আমি কোনও দিনও ভুলবো না।
তোমাকে পারিনি দিতে এক মুঠো রোদ্দুর।
আমিও একজনকে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম সাহায্যের হাত-
সে মনেই রাখলে না, গটগট করে চলে গেলে কোথা!
আহা আমি বন্ধুত্ব প্রেম কৃতজ্ঞতা কিছুই চাইনি-
শুধু চেয়েছিলাম এক চিলতে আকাশ!



ছেলেবেলায় তুমি খেলতে আমার সাথে।
তখন আমি লিঙ্গভেদ বুঝতাম না
কারণ তখনও আপেল আমি ছুঁইনি!
তোমার মুখটা আর ভালো করে মনেই পরে না।
শুনেছি তুমি বরের সঙ্গে সুখে আছো,
আর আমাদের ক্রীড়াভূমি আগাছায় ভরে গেছে।



তোমাকে নিয়ে গান বাঁধতাম বলে,
আমার সাদা কাপড়ে তুমি দিলে কালো দাগ।
সে দাগ আজও লেগে আছে!
এখন মুখে গান না গাইলেও,
মন গান গায়, প্রাণ সুর বাঁধে।
আহা তোমার উপর আমার কোনও রাগ নেই-
আছে এক জলাশয় অভিমান!



মনে পরে একসাথে দুজনে সাঁতার শিখতাম।
শুধু সাঁতারই শিখতাম (অন্যকিছু নয়)।
তবে রথ দেখা কলা বেচা দুটোই হতো।
থাকে গে সে সব কথা।


১০


তোমরা কে কোথায় আছো এখন?
আমায় কী কারো মনে পড়ে?
না, আমিই শুধু মনে করে যাব,
আর তোমরা আমায় ঠেলে দেবে বিস্মৃতির অন্ধকারে চিরতরে!